বাস্তব সংখ্যা: বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ, প্রকারভেদ লেকচার শীট পিডিএফ ডাউনলোড: বাস্তব সংখ্যার বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ এবং প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা, রাশানাল ও অ্যারাশানাল সংখ্যা, শূন্য, এবং তাদের গাণিতিক গুণাবলী । বাস্তব সংখ্যাগুলির বিভিন্ন প্রকার, যেমন ভগ্নাংশ, পূর্ণসংখ্যা, এবং অঋণাত্মক সংখ্যা নিয়ে উদাহরণসহ সম্পূর্ণ ধারণা পেতে এখনই লেকচারটি পড়ে ফেলুন। তহলে চলো, শুরু করি।
বাস্তব সংখ্যা: বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ, প্রকারভেদ
১। স্বাভাবিক সংখ্যা (Natural Numbers):
সকল ধনাত্মক অখন্ড সংখ্যা হল স্বাভাবিক সংখ্যা। যেমনঃ 1,2,3,4…। এখানে 2,3,5,7 ইত্যাদি মৌলিক সংখ্যা (Prime Number) এবং 4,6,8,9 ইত্যাদি যৌগিক সংখ্যা (Com-plex Number)। 1 অপেক্ষা বড় যে সকল স্বাভাবিক সংখ্যার 1 এবং ঐ সংখ্যাটি ছাড়া আর কোনো গুণনীয়ক নেই সেকল সংখ্যাই মৌলিক সংখ্যা। যেমন: 2, 3, 5, 7 ইত্যাদি। যে সংখ্যার দুইয়ের অধিক গুণনীয়ক আছে তাকে যৌগিক সংখ্যা বলে। যেমন 4, 6, 8, 21 ইত্যাদি যৌগিক সংখ্যা। 0 ও 1 ছাড়া সকল স্বাভাবিক সংখ্যাই হয় মৌলিক সংখ্যা নয়তো যৌগিক সংখ্যা। স্বাভাবিক অখণ্ড সংখ্যা ধনাত্মক বা ঋণাত্মক উভয় প্রকার হতে পারে। তখন এদের ইংরেজিতে Integer বলা হয়।
২। জটিল সংখ্যা
বাস্তব ও কাল্পনিক সংখ্যা নিয়ে যে সংখ্যা গঠিত হয় তাকে জটিল সংখ্যা বলে। অর্থাৎ, যদি a এবং b বাস্তব সংখ্যা হয়, তবে a+ ib আকারের রাশিকে জটিল সংখ্যা বলে। যেমন- 3 + 2i একটা জটিল সংখ্যা, যার বাস্তব অংশ 3 এবং কাল্পনিক অংশ 2।
৩। পূর্ণসংখ্যা (integer):
শূন্যসহ সকল ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অখন্ডক সংখ্যাকে পূর্ণসংখ্যা বলা হয়। অর্থাৎ-3, -2,-1,0,1, 2, 3 ইত্যাদি পূর্ণসংখ্যা।
৪। ভগ্নাংশ সংখ্যা (Fractional Numbers):
p/q আকারে কোন সংখ্যাকে সাধারণ ভগ্নাংশ বলে। যেখানে ৭০ এবং q≠11 যেমন 1/2, 3/2 ইত্যাদি সাধারণ ভগ্নাংশ। কোন সাধারণ p/q ভগ্নাংশে p < q হলে প্রকৃত ভগ্নাংশ এবং p > q হলে অপ্রকৃত ভগ্নাংশ।
৫। মূলদ সংখ্যা ( Rational Numbers):
কোন সংখ্যাকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায়, যখন p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং ৭ ≠ 0, সেই সংখ্যাকে মূলদ সংখ্যা বলা হয়। যেকোন মূলদ সংখ্যাকে দুইটি সহমৌলিক সংখ্যার অনুপাত হিসেবেও লেখা যায়। সকল পূর্ণসংখ্যা ও ভগ্নাংশই মূলদ সংখ্যা। যেমন 3/1 = 3, 11/2= 5.5, 5/3 = 1.666…। সকল পূর্ণসংখ্যা এবং সকল ভগ্নাংশ মূলদ সংখ্যা।
৬। অমূলদ সংখ্যা (Irrational Numbers):
যে সংখ্যাকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায় না, যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা নয় এবং q ≠ 0, সে সংখ্যাকে অমূলদ সংখ্যা বলা হয়। পূর্ণবর্গ নয় এরুপ যেকোন স্বাভাবিক সংখ্যার বর্গমূল কিংবা তার ভগ্নাংশ একটি অমূলদ সংখ্যা। সকল পূর্ণসংখ্যা এবং সকল ভগ্নাংশ মূলদ সংখ্যা।
মূলদ সংখ্যাকে দুইটি পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসাবে প্রকাশ করা যায়। কোন অমূলদ সংখ্যাকে দুইটি পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না।
৭। দশমিক ভগ্নাংশ সংখ্যা:
যেকোনো মূলদ সংখ্যাকে ও অমূলদ সংখ্যাকে দশমিক দিয়ে প্রকাশ করা হলে একে দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। যেমন 3 = 3.0, 5/2 = 2.5, √3= 1.732 ইত্যাদি দশমিক ভগ্নাংশ।
৮। সসীম দশমিক ভগ্নাংশঃ
যেকোনো সংখ্যার দশমিক বিন্দুর পর অংকের সংখ্যা সসীম হলে তাকে সসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলে। যেমন: 0.52, 3.4152 ইত্যাদি সসীম দশমিক ভগ্নাংশ।
৯। অসীম দশমিক ভগ্নাংশঃ
কোনো সংখ্যার দশমিক বিন্দুর পর অংকের সংখ্যা অসীম হলে তাকে অসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলে। যেমনঃ 4/3 = 1.333…, √5 = 2.1235….. ইত্যাদি অসীম দশমিক ভগ্নাংশ।
একইভাবে, অসীম দশমিক ভগ্নাংশগুলোর মধ্যে দশমিকের পর কিছু সংখ্যার পুনরাবৃত্তি হলে তাকে অসীম আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ এবং অংকগুলোর পুনরাবৃত্তি না হলে একে অসীম অনাবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ বলে। যেমন 122/99= 1.2323….., 5.1654654……. ইত্যাদি অসীম আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ এবং 0.523050056 অসীম অনাবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ । উল্লেখ্য যে, অসীম দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক বিন্দুর পর যে অংশটুকু পুনরাবৃত্তি ঘটে তাকে আবৃত্ত অংশ বলে। এই অংশটুকুর উপর পৌনঃপুনিক বিন্দু দিয়েও সংখ্যাটিকে প্রকাশ করা যায়।
১০। বাস্তব সংখ্যা (Real Nubers):
সকল মূলদ ও অমূলদ সংখ্যাকেই বাস্তব সংখ্যা বলা হয়। যেমন: 0, ±1, ± 2, ± 3…. ± 1/2, ±4 /3, √ 5, √ 4, √ 3
১১। ধনাত্মক সংখ্যা (Positive Number):
শূণ্য অপেক্ষা বড় সকল বাস্তব সংখ্যাকেই ধনাত্মক সংখ্যা বলে। যেমন: 2, 1/2, 3/2, √ 2
১২। ঋণাত্মক সংখ্যা (Negative Number):
শূণ্য অপেক্ষা ছোট সকল বাস্তব সংখ্যাকেই ঋণাত্মক সংখ্যা বলে। যেমন: -2, -1/2, -3/2, – √ 2
১৩। অঋণাত্মক সংখ্যা (Non-negative Number):
শুণ্যসহ সকল ধনাত্মক সংখ্যাকে অঋণাত্মক সংখ্যা বলে। যেমন: 0,3, 1/2, 0.6554
১৪। বাস্তব সংখ্যার মৌলিক বৈশিষ্ট
যেকোনো দুটি বাস্তব সংখ্যা হলে,
i. দুটি বাস্তব সংখ্যার যোগফল বাস্তব সংখ্যা হবে
ii. দুটি বাস্তব সংখ্যার বিয়োগফল বাস্তব সংখ্যা হবে
iii. দুটি বাস্তব সংখ্যার গুণফল বাস্তব সংখ্যা হবে
iv. দুটি বাস্তব সংখ্যার ভাগফল বাস্তব সংখ্যা হবে
V. a+b = b + a
vi. ab = ba
a, b, c তিনটি বাস্তব সংখ্যা হলে,
I. (a+b)+c = a+(b+c)
II. (ab)c = a(bc)
III. a(b+c) = ab +ac
IV. ab হলে a+c < b+c V. a < bএবং c>০ হলে ac < bc
১৫। বিভাজ্যতা:
বিভাজ্যতা বলতে বোঝায় একটি সংখ্যা অপর একটি সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য কিনা। সহজভাবে বললে, একটি সংখ্যাকে যদি অপর একটি সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ শুণ্য হয়, তবে প্রথম সংখ্যাটি দ্বিতীয় সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য।
• ১ এর বিভাজ্যতাঃ যে কোন সংখ্যাই ১ দিয়ে বিভাজ্য।
• ২ এর বিভাজ্যতাঃ যে সব সংখ্যা জোড় ( ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২…….) তারাই ২ দিয়ে বিভাজ্য। আরও সহজভাবে বলা যায়, যে সব সংখ্যার শেষ অংক (২, ৪, ৬, ৮, ০ ) তারাই ২ দ্বারা বিভাজ্য। যেমনঃ ৫৯৮, ৪৫৫৪, ৬৬২৩৫১০ ইত্যাদি।
• ৩ এর বিভাজ্যতাঃ তিন (৩) দ্বারা বিভাজ্যতার ক্ষেত্রে সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর সমষ্টি ৩ দ্বারা বিভাজ্য কি না। ২১৪৫ সংখ্যাটির অংক গুলোর যোগফল হচ্ছে ১২ যা ৩ দিয়ে বিভাজ্য। সুতরাং, ২১৪৫ সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য। আরও কিছু উদাহারণ যা ৩ দিয়ে বিভাজ্য- ২০৮৭১১২, ৫৯২৩৮ ইত্যাদি।
• ৪ এর বিভাজ্যতাঃ একটি সংখ্যা ৪ দিয়ে বিভাজ্য কি না তা দেখতে হলে সংখ্যাটির শেষ ২ টা অংক ৪ দিয়ে বিভাজ্য কি না তা দেখতে হবে। কিছু উদাহারণ যা ৪ দিয়ে বিভাজ্য- ১২৮, ১০৮, ১৭০২৪, ৪৪০, ৭৪৫২৮।
• ৫ এর বিভাজ্যতাঃ কোনো সংখ্যার শেষ অংক যদি ৫ বা ০ হয় তবেই সংখ্যাটি ৫ দ্বারা বিভাজ্য। যেমনঃ ১২৩৫, ৫৪৮৬৫, ১১১৫ ইত্যাদি।
• ৬ এর বিভাজ্যতাঃ সংখ্যাটি জোড় এবং অংকগুলোর যোগফল ৩ দ্বারা বিভাজ্য হলে উক্ত সংখ্যাটি ৬ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমনঃ ২১৯০, ২০৮৭১১২ ইত্যাদি।
• ৭ এর বিভাজ্যতাঃ এককের অঙ্ককে বর্গ করে বাকি সংখ্যা থেকে বিয়োগ দিতে হবে। বিয়োগফলকে ৭ দ্বারা ভাগ করতে হবে। ভাগশেষ শূন্য হলে সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য আর না হলে ৭ দ্বারা বিভাজ্য না। ধরি, একটা সংখ্যা ৬৭২। এককের অঙ্ক ২ কে বর্গ করলে পাওয়া যায় ৪। বাকি সংখ্যা ৬৭ থেকে ৪ বিয়োগ করলে দাঁড়ায় ৬৩ যা ৭ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। সুতরাং, ৬৭২ সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য।
• ৮ এর বিভাজ্যতাঃ কোন সংখ্যা যদি ৩ বা তার চেয়ে বেশি অংক বিশিষ্ট হয় তবে ৮ দিয়ে বিভাজ্যতা দেখতে শুধুমাত্র শেষ ৩ অংক দেখতে হবে তা ৮ দিয়ে বিভাজ্য কি না। যদি শেষ ৩ অংক ৮ দিয়ে বিভাজ্য হয় তবেই সংখ্যাটি ৮ দিয়ে বিভাজ্য। যেমনঃ ৫৪৮৬৬৪, ৪৪৮১৬, ৫৪৮৫৬১৬ ইত্যাদি।
• ৯ এর বিভাজ্যতাঃ সংখ্যাটির সবগুলো অংক যোগ করলে যোগফল যদি ৯ দিয়ে বিভাজ্য হয় তবেই সংখ্যাটি ৯ দিয়ে বিভাজ্য। যেমনঃ ৫৮৫, ১২৩৩৯, ৬১৪২০৫ ইত্যাদি।
• ১০ এর বিভাজ্যতাঃ কোন সংখ্যার শেষ অংক যদি ০ হয় তবেই সংখ্যাটি ১০ দিয়ে বিভাজ্য। যেমনঃ ২০,৮০,৫৪০০,৫৫৮৭০ ইত্যাদি।
১৬। ভাজ্য: যে সংখ্যাকে ভাগ করা হয় তাকে ভাজ্য বলে।
১৭। ভাজক: যে সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয় তাকে ভাজক বলে।
১৮। ভাগফল: ভাগ করায় যে ফল বা উত্তর আসবে তাকে ভাগফল বলে।
১৯। শূন্যের ধর্মঃ
• শূন্যের সঙ্গে কোনো সংখ্যা যোগ করলে সেই সংখ্যাটিই পাওয়া যায়।
• কোনো সংখ্যা থেকে শূন্য বিয়োগ করলে সেই সংখ্যাটিই পাওয়া যায়।
• শূন্যকে কোনো সংখ্যা দ্বারা গুণ করলে গুণফল সর্বদাই শূন্য হয়।
• শূন্যকে যে-কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল সর্বদা শূন্য হয়।
• কোনো সংখ্যাকে শূন্য দ্বারা ভাগ করলে তার কোনো অর্থ থাকে না। অর্থাৎ শূন্য দ্বারা ভাগ অসংজ্ঞায়িত (undefined)।
• যে-কোনো অশূন্য সংখ্যার ঘাত (power) শূন্য হলে, উত্তর 1 হবে।
• শূন্য-এর ঘাত অশূন্য সংখ্যা হলে, উত্তর শূন্য হবে।
• শূন্য-এর ঘাত শূন্য অর্থাৎ অসংজ্ঞায়িত।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (নিজে কর)
১। নিচের কোন সংখ্যাটি পূর্ণসংখ্যা নয়?
ক) ০
খ) ১
গ) ১১
ঘ) ১/১১
২। নিচের কোন সংখ্যাটি মূলদ সংখ্যা নয়?
ক) ৩/১
খ) ১১/২
গ) ১২/০
ঘ) ৫/৬
৩। নিচের কোনটি ধনাত্মক সংখ্যা নয়?
ক) ৩
খ) ৫/৬
গ) ০
ঘ) ১/২
৪। নিচের কোন সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা?
ক) ৩৩
খ) ৩৭
গ) ৩৮
ঘ) ৩৫
৫। নিচের কোন সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা নয়?
ক) ৭৫
খ) ৭১
গ) ৭৩
ঘ) ৭৯
৬। দুটো সংখ্যা a,b বাস্তব সংখ্যা হলে কোনটি সঠিক নয়?
ক) a+b বাস্তব সংখ্যা
খ) a/b বাস্তব সংখ্যা নয়
গ) a-b বাস্তব সংখ্যা
ঘ) a+b=b+a
৭। তিনটি সংখ্যা a,b,c বাস্তব সংখ্যা হলে, কোনটি সঠিক নয়?
ক) (a+b)+c = a+(b+c)
খ) (ab)c = a(bc)
গ) a(b+c) = abc
ঘ) a<b হলে a+c<b+c
৮। ৯ এর ঘন কত?
ক) ৭২৯
খ) ৮৮১
গ) ৫১২
ঘ) ৭৭৭
৯। যে সংখ্যাকে ভাগ করা হয় তাকে কি বলে?
ক) ভাজক
খ) ভাগফল
গ) ভাজ্য
ঘ) কোনোটি নয়
১০। যদি a একটি বাস্তব সংখ্যা হয়, তবে কোনটি সঠিক?
ক) a+0 = 0-a
খ) a.1 = 1.a
গ) a+(-a) = 1
ঘ) axa = 2a
১১। নিচের কোন সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা নয়?
ক) ১১
খ) ১৯
গ) ১৭
ঘ) ১৫
১২। ৩৪৩ এর ঘনমূল কত?
ক) ৫
খ) ১
গ) ৭
ঘ) ৯
বাস্তব সংখ্যা: বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ, প্রকারভেদ লেকচার শীট পিডিএফ ডাউনলোড