হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা নোট/গাইড PDF Download

Advertisements

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্রের ৫ম অধ্যায় হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকে প্রতিবছর বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকে। এই লেকচারে আলোচনা করা হয়েছে হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালার ধারণা, হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা নির্ধারণ, সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ, আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণে হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালার প্রভাব। আরো আছে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন তাই আমাদের হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা লেকচার শীটটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করুন ।।

ভূমিকা: হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা

হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়। এ ভাষা বা তথ্য যাতে সকলের নিকট একই অর্থবোধক হয় সেজন্য হিসাবরক্ষকগণ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন বা প্রথার প্রচলন করেছেন। এর ফলে হিসাবরক্ষণ কাজে একই ধরণের নীতিমালা অনুসরণ করা হয় এবং একজনের প্রস্তুতকৃত হিসাবপত্র সকলেই বুঝতে পারে।

পাঠ-১. হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালার ধারণা

হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালার ধারণা (Principles of Accounting Concept)

আধুনিক হিসাববিজ্ঞান ক্রমান্নয়ে সুনির্দিষ্ট হিসাববিজ্ঞান নীতিমালার উপর প্রতিফলিত হয়েছে। ব্যবহারিক প্রয়োজনে এর বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষসমূহ যেমন-মালিক, বিনিয়োগকারী, ঋণদাতা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিষ্ঠানের সঠিক আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য যথাযথ ও তুলনাযোগ্যভাবে উপস্থাপনের জন্য হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায় যুগোপযোগী করা হয়েছে। এজন্য হিসাববিজ্ঞানীগণ ও বিভিন্ন গবেষকগন কর্তৃক হিসাববিজ্ঞানকে সহজ সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এই নীতিগুলো কোনো আইন নয়; তবে আইনের কাছাকাছি বটে।

Advertisements

হিসাববিজ্ঞানের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা এবং উদ্দেশ্যাবলি সাধনের জন্য কতকগুলো মৌলিক ধারণা এবং প্রচলিত প্রথা প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এদেরকে সামগ্রিকভাবে হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা বলা হয়। এগুলো সাধারণ অভিজ্ঞতা, ঐতিহাসিক নজির, ব্যক্তি ও পেশাদার সংগঠনসমূহের বিবৃতি এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের বিধানাবলি হতে এসেছে। এই সকল নীতিসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

ক. হিসাববিজ্ঞান ধারণা,

খ. হিসাববিজ্ঞান প্রথা।

ক. হিসাববিজ্ঞান ধারণা (Accounting Assumption)

হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কতকগুলো মৌলিক ধারণা প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। যথা:

১. স্বত্বামূলক ধারণা (Entity Assumption)

এ তত্ত্ব অনুযায়ি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে মালিককে ভিন্ন অনুমান করা হয়। যার ফলাফল হলো মালিক ও কারবার দুটি পৃথক স্বত্বার অধিকারি। এ ধারণা মতে মালিক ও কারবারের হিসাবকে পৃথকভাবে রাখতে হয়। স্বত্বামূলক ধারণার ভিত্তি হলো তিনটি। যেমন-

i. মালিকানা স্বত্ব (Owners entity): কারবার প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির উপর মালিকপক্ষের যে অধিকার বা দাবী রয়েছে তাকে মালিকানা স্বত্ব বলে।

ii. দায় স্বত্ত্বা (Liabilities entity): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির উপর মালিক ব্যতীত তৃতীয় পক্ষের যে দাবী রয়েছে তাকে দায় স্বত্বা বলে।

iii. ব্যবসায়িক স্বত্বা (Business entity): ব্যবসায়ের ক্রয়কৃত সম্পদই হলো ব্যবসায়িক স্বত্বা। ব্যবসায়

প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তৃতীয় পক্ষের নিকট জবাবদিহিতা ও দায় দায়িত্ব রয়েছে বিধায় ব্যবসায়ের ক্রয়কৃত সম্পদই হলো ব্যবসায়িক স্বত্ত্বা।

২. চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা (Going concern Assumption)

হিসাববিজ্ঞানের এ ধারণা অনুযায়ী কতিপয় স্বল্পমেয়াদী প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত সচল থাকবে। এ নীতির কারণেই আয় ও ব্যয়কে মূলধন ও মুনাফাজাতীয় ব্যয়ে বিভক্ত করা হয়েছে। এ ধারণার উপর ভিত্তি করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। স্থায়ী সম্পদের ক্ষেত্রে তার আয়ুষ্কাল পর্যন্ত অবচয় ধরতে হয় এবং আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তিগুলো হতে অবচয় বাদ দিয়ে দেখানো হয়।

৩. হিসাবকাল ধারণা (Accounting period Assumption)

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত চলতে থাকবে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট জীবন শেষ হলেই হিসাব নিকাশ করা হবে- এটা কাম্য নয়। কেননা কারবারের সাথে জড়িত পক্ষসমূহ নির্দিষ্ট সময় পরপর তাদের ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি ও আর্থিক অবস্থা জানতে চায়। হিসাবরক্ষকগণ কারবারের যাবতীয় কার্যকালকে বিজ্ঞচিতভাবে কয়েকটি সমান সময়ের এককে ভাগ করে থাকেন, যাকে হিসাবকাল ধারণা বলা হয়।

৪. আর্থিক একক ধারণা (Monetary unit assumption)

এই ধারণা অনুযায়ী শুধুমাত্র অর্থের অংকে নিরূপণযোগ্য লেনদেনগুলোকে একমাত্র হিসাবের বইতে লেখা হবে। যখনই কোনো লেনদেন হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা হবে উহা সর্বদাই অর্থের অংকে নিরূপণ করে নিতে হবে।

৫. বকেয়া ভিত্তিক ধারণা (Accrual Basis Assomption)

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সাধারণত বকেয়া ভিত্তিক ধারণার উপর আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করে থাকে। বকেয়া ভিত্তিক ধারণা হচ্ছে, যখনই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সংঘটিত হবে তখনই লিপিবদ্ধ হবে (নগদ প্রবাহ হোক অথবা না হোক)। যেমন: বাকীতে পণ্য বিক্রয় ৫০,০০০ টাকা। এই লেনদেন-এর মাধ্যমে নগদ টাকা পাওয়া যায়নি কিছু একটি দ্বারা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তাই লেনদেনটি ব্যবসায়ের হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। আবার ৬,০০০ টাকা বেতন প্রদান করা হলো, এটিও এখানে লিপিবদ্ধ হবে। মোট কথা নগদ প্রবাহ হোক অথবা না হোক লেনদেন হলেই হিসাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

খ. হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা (Accomting Principles)

হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালাকে নিম্নোক্ত চারভাগে ভাগ করা হয়:

১. ঐতিহাসিক ব্যয় নীতি/ক্রয় মূল্য নীতি (Historical cost principles)

এ রীতি অনুযায়ী কোনো আয়, ব্যয়, সম্পদ, দায় ও মূলধন সংক্রান্ত লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সময় যে মূল্যে হিসাবভুক্ত হয়ে থাকে ঐ একই মূল্যে বিশদ আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে দেখাতে হবে।

২. রাজস্ব স্বীকৃত নীতি (Revenue recognition principle)

রাজস্ব স্বীকৃত নীতি বলতে বুঝায়, যে হিসাব বছরে আয় অর্জিত হয়েছে সেই হিসাব বছরে তা হিসাবভুক্ত করতে হবে। এ নীতি অনুযায়ী যদি হিসাব বছরে ক্রেতার নিকট পণ্যের মালিকানা স্বত্ব হস্তান্তরিত হয় বা কোনো সেবা প্রদান সম্পন্ন হয় এবং এর ফলে পণ্য ক্রেতা বা সেবাগ্রহণকারীর নিকট হতে অর্থ আদায়ের অধিকার সৃষ্টি হয় তখন তা আয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়।

৩. মিলকরণ/ব্যয় স্বীকৃতি নীতি (Matching/expense recognition principle)

এ নীতি অনুযায়ী কোনো হিসাবকালে যদি খরচ নগদ অথবা ধারে সংঘটিত হয় তাহলে খরচগুলোকে ঐ হিসাবকালের খরচ হিসাবে লিপিবদ্ধ হবে। আবার যদি কোনো অগ্রিম খরচ প্রদান করা হয় তবে উক্ত খরচ ঐ হিসাবকালের খরচ হিসেবে বিশদ আয় বিবরণীতে লিপিবদ্ধ হবে না। অর্থাৎ অগ্রিম খরচ সংশ্লিষ্ট খরচ থেকে বাদ দিয়ে দেখানো হয়।

৪. পূর্ণ প্রকাশ নীতি (Full disclose principle)

এ নীতি অনুসারে আর্থিক বিবরণীতে প্রতিবছরে অভ্যন্তরীণ এবং বহিস্থ ব্যবহারকারীর নিকট গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত তথ্যগুলো পূর্ণ প্রকাশ করতে হয়।

গ. হিসাববিজ্ঞান প্রথা (Accounting convention)

হিসাব সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য যে সকল প্রচলিত রীতি ও আচরণবিধি মেনে চলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আর্থিক বিবরণী ও এর তথ্যসমূহ সঠিক, সহজ, সাবলীল ও অর্থবহভাবে আগ্রহী পক্ষসমূহের নিকট উপস্থাপন করা হয় তাই হিসাব সংক্রান্ত প্রথা। যথা:

১ . রক্ষণশীলতার প্রথা (Convention of conservation)

রক্ষণশীলতা হিসাববিজ্ঞানের একটি রক্ষণাত্মক নীতি যা প্রতিটি মানুষের সাধারণ চেতনার মতো কাজ করে। এর প্রকৃত অর্থ হলো এই যে, যেখানে অনিশ্চয়তা বিরাজমান সেখানে নিজেকে নিরাপদ অবস্থানে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লাভের চেয়ে লোকসানের বিষয়ে অধিক সচেতন হওয়াকে হিসাবশাস্ত্রে রক্ষণশীলতা বলে।

২. সামঞ্জস্য প্রথা (Consistency convention)

এই প্রথা অনুসারে একটি প্রতিষ্ঠানে সঠিক হিসাব নিকাশ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োগকৃত নিয়ম ও রীতি-নীতি ক্রমান্বয়ে অনুসরণ করা। অর্থাৎ হিসাব রক্ষণাবেক্ষণে একবার যে নীতি বা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রতিটি হিসাবকালে ব্যবহার করতে হয়।

৩ .বস্তুনিষ্ঠতার প্রথা (Materiality convention)

হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে এ নীতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হিসাব লিখনের সময় ব্যবসা সংক্রান্ত কোন তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটি তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ তা বিচার করেই হিসাব লিপিবদ্ধ করতে হয়।

৪. শিল্পচর্চা (Industry practices)

কোনো কোনো শিল্পের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারণে সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালার বাইরে গিয়েও তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। যেমন-ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, পোল্ট্রি ফার্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান।

৫. ব্যয় সুবিধা সম্পর্ক প্রথা (Cost benefit constraint)

হিসাববিজ্ঞান কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে কি কি তথ্য প্রদান করবে বা কি কি তথ্য সংরক্ষণ ও তৈরি করবে তা নির্ভর করে তথ্য তৈরি ও সংরক্ষণ করতে যে খরচ হয় উহার সাথে উক্ত তথ্য হতে প্রাপ্ত সুবিধার সম্পর্কের উপর। যদি তথ্য সংরক্ষণ ও তৈরির খরচের তুলনায় উক্ত তথ্য হতে প্রাপ্ত সুবিধা বেশি হয় তবেই হিসাববিজ্ঞানে ঐ সমস্ত তথ্য তৈরি ও সংরক্ষণ করা হয়।

আরো পড়ুন :

পাঠ-২. হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা নির্ধারণ, সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ

পৃথিবীর প্রতিটি দেশে হিসাববিজ্ঞানের তথ্যের মানকে সমরূপ করার জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা নির্ধারণ, সংশোধন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হল-

১. ফিন্যানশিয়াল একাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড (Financial Accounting Standard Board – FASB): FASB একটি সর্বজন স্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৭৩ সালে আমেরিকায় গঠিত হয়। এটি একটি স্বাধীন অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান। FASB ফিন্যানশিয়াল একাউন্টিং ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত হয়। এর সদস্য সংখ্যা সাত।

২. আমেরিকান ইনষ্টিটিউট অব সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্ট্যান্টস (American Institute of Certified Public Accountants AICPA): এটি সার্টিফাইড পাবলিক হিসাববিজ্ঞানীদের একটি পেশাগত সংস্থা। FASB এর পূর্বে আমেরিকান ইনষ্টিটিউট অব সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্ট্যান্টস এর কমিটির উপর সর্বজন স্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা (GAAP) নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল। ইহা ১৮৮৭ সালে গঠিত হয়। AICPA ১২৮টি দেশের ৩,৯৪,০০০ এরও বেশী সদস্যদের নিয়ে গঠিত।

৩. একাউন্টিং প্রিন্সিপলস বোর্ড (Accounting Principles Board- APB): ১৯৫৯ সালে American Institute of Certified Public Accountants কর্তৃক Accounting Principles Board নামে ১৮ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করে। AICPA এই বোর্ডকে সর্বজন স্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা সম্পর্কিত তাদের মতামত প্রকাশ করার পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করে। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এই বোর্ড ৩১টি মতামত প্রকাশ করেন। উক্ত নীতিমালাগুলোর মধ্যে ১৯টি নীতিমালা এখনও সর্বজন স্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা হিসাবে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত এবং বিশ্লেষণে ব্যাপকভাবে অনুসৃত হচ্ছে।

৪. আমেরিকান একাউন্টিং এসোসিয়েশন American Accounting Association-AAA) এটি পেশাগত হিসাববিজ্ঞান শিক্ষার একটি সর্বোৎকৃষ্ট স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন। ১৯৮৫ সালে আমেরিকান একাউন্টিং এসোসিয়েশন গঠিত হয়। এই সংগঠনটি হিসাববিজ্ঞান নীতিমালা নির্ধারণে ও এর উন্নয়নে পরোক্ষভাবে এবং দীর্ঘ পরিসরে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

৫. সিকিউরিটিজ এবং একচেঞ্জ কমিশন (আমেরিকা) (Securities and Exchange Commission – U.S.A): ১৯৩৪ সালে আমেরিকায় সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশন গঠিত হয়। ইহা একটি সরকারি কমিশন যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার্থে কাজ করে থাকে। ইহা জনসাধারণের কাছে সিকিউরিটিজ বিক্রয়ের আহবানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব সংক্রান্ত নীতিমালা ও বিধি বিধান নির্ধারণ ও বলবৎ করার আইনগত ক্ষমতার অধিকারী।

৬. আন্তর্জাতিক হিসাব মান নির্ণায়ক বোর্ড (International Accounting Standards Board – IASB) : ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক হিসাব মান নির্ণায়ক কমিটির স্থলে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান নির্ণায়ক বোর্ড গঠিত হয়। ২০০১ সালে ১লা এপ্রিল হতে এই বোর্ড কার্যকরভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। IASB এর প্রধান কাজ হল, হিসাবমান উন্নয়ন করা, কার্যকর করা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষন করা।

৭. আন্তর্জাতিক হিসাব মান নির্ণায়ক কমিটি (International Accounting Standards Committee): সারা বিশ্বে হিসাবরক্ষণ পদ্ধতিও আর্থিক বিবরণীসমূহ সমরূপ করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানী, জাপান, ম্যাক্সিকো, নেদারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং আমেরিকা এই নয়টি দেশের ১৬টি হিসাব সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে যুক্তরাজ্যে এই আন্তর্জাতিক হিসাব মান নির্ণায়ক কমিটি গঠিত হয়। ইহার প্রধান কার্যালয় লন্ডনে অবস্থিত। এই সংস্থা (IASC) কর্তৃক প্রতি বছর হিসাব প্রয়োগ ও নীতি সংক্রান্ত যে সকল মান প্রকাশিত হয় সেগুলোকে আন্তর্জাতিক হিসাব মান বলে।

৮. ইনষ্টিটিউট অব চাটার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (Institute of Chartered Accountants of Bangladesh – ICAB)ঃ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আদেশে ১৯৭৩ সালে Institute of Chartered Accountants of Bangladesh ICAB গঠিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত। ICAB একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা। এই সংস্থাটি আন্তর্জাতিক হিসাব মান কমিটির (IASC) সদস্য। এই সংস্থাটির বাংলাদেশের হিসাববিদদের চাটার্ড উপাধি প্রদান করার ক্ষমতা আছে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৪০০ জনের বেশী। এটির আঞ্চলিক দপ্তর ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অবস্থিত। সদস্য হিসাবে IASC কর্তৃক গৃহিত হিসাব মান সমূহ গ্রহণ এবং তা প্রবর্তন করার দায়িত্ব এ সংস্থার। ICAB সংস্থাটি জনস্বার্থে উচ্চমান সম্পন্ন হিসাব সেবা প্রদান এবং হিসাববিজ্ঞান পেশাকে ত্বরান্বিতকরণ ও সমন্বয়সাধনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

৯. ইনষ্টিটিউট অব কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (Institute of Cost and Management Accountants of Bangladesh-ICMAB): ১৯৭৭ সালে এই ইনষ্টিটিউট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ঢাকার নীলক্ষেতে অবস্থিত। এর পরিচালনা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৬ জন। বর্তমানে এর ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১৩০০ জন। বাংলাদেশে এটি একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞান গবেষণা ও শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করে। শিক্ষাদানের পাশাপাশি সংস্থাটি উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞানকে পেশা হিসাবে প্রবর্তন, নিয়ন্ত্রণ ও সম্প্রসারণের কাজ করে থাকে।

পাঠ-৩. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণে হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালার প্রভাব

হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে না পারলে সঠিক আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না। কাজেই এই নীতিমালা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা একান্ত প্রয়োজন। হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালাগুলোর প্রভাব নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১। স্বত্বা ধারণা (Entity Assumption): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে মালিককে আলাদা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মালিক প্রতিষ্ঠানের নিকট কত টাকা দাবী করছেন তা নির্ধারণের জন্য-এর প্রভাব রয়েছে। মালিকানা স্বত্ব = মূলধন + নীট লাভ নীট ক্ষতি উত্তোলন।

২। চলমান ব্যবসায় ধারণা (Going Concern Assumption): মূলধনজাতীয় ও মুনাফাজাতীয় ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে চলমান ধারণা নীতির প্রভাব রয়েছে। যথা: আসবাবপত্র ক্রয় ৫০,০০০ টাকা, হিসাব বছরে অবচয় ধার্য্য করা হলো ১০,০০০ টাকা। এখানে আয় বিবরণীতে ১০,০০০ টাকা এবং আর্থিক বিবরণীতে (৫০,০০০ – ১০,০০০) বা ৪০,০০০ টাকা হিসাবভুক্ত হবে।

৩। হিসাব কাল ধারণা (Accounting Period Assumption) : চলমান ব্যবসায় ধারণা অনুযায়ী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে অনির্দিষ্ট সময় কাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। তথাপিও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে প্রতিষ্ঠানের ফলাফল জানার জন্য আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। এই নির্দিষ্ট সময়কেই হিসাব কাল বলে। হিসাব কাল যেমন ১ মাস, ৬ মাস এবং ১ বছর হতে পারে। সাধারনতঃ প্রতিষ্ঠানের হিসাব কাল ১ বছর হয়ে থাকে।

৪। আর্থিক মূল্যের একক ধারণা (Monetary Unit Assumption): আর্থিক মূল্যের ধারণা অনুযায়ী ঐ সমস্ত লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধ করতে হবে যেগুলো অর্থের মূল্যে প্রকাশ করা যায়। অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য নয় এমন কোন ঘটনা হিসাবের বহিতে লিপিবদ্ধ করা যাবে না।

৫। ক্রয় মূল্য নীতি (Cost Principle): এই নীতি অনুযায়ী ব্যবসায়ের সম্পদসমূহ যখন যে মূল্যে ক্রয় করা হবে সেই মূল্যেই অর্জন ব্যয়সহ উক্ত সম্পত্তিসমূহ আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শন করতে হবে। যেমন একটি মেশিন ১০,০০০ টাকা দ্বারা ক্রয় করে পরিবহণ ব্যয় ২,০০০ টাকা এবং সংস্থাপন ব্যয় ৩,০০০ টাকা পরিশোধ করা হলো। আর্থিক বিবরণীতে মেশিন বাবদ ১৫,০০০ টাকা লিপিবদ্ধ করেতে হবে।

৬। আয় স্বীকৃত নীতি (Revenue Recognition Principle): এই নীতি অনুসারে কোন মুনাফা প্রাপ্তি বা প্রাপ্য অর্থকে ঐ হিসাবকালের আয় হিসাবে বিবেচনা করা হবে। হিসাবকালের মধ্যে প্রাপ্তি বা প্রাপ্য না হলে তা আয় হিসাবে উক্ত হিসাবকালে বিবেচনা করা হবে না। যেমন, বিনিয়োগের সুদ ৫০০ টাকা হিসাবকালের মধ্যে পাওনা হয়েছে কিন্তু পাওয়া যায়নি। এ ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট হিসাবকালে আয় হিসাবে ধরতে হবে এবং আর্থিক বিবরণীর সম্পদ পার্শ্বে যাবে।

৭। ব্যয় সংযোগ/মিলকরণ নীতি (Matching Princple): এই নীতি অনুসারে যে হিসাবকালে ব্যয় সংঘটিত হয় (নগদ অর্থ প্রদান করা না হলেও) সেই হিসাবকালেই উক্ত খরচ লিপিবদ্ধ করতে হবে। যেমন, হিসাবকালে রহিমকে ৫০০ টাকা বেতন দেওয়া হয়নি অর্থাৎ বেতন বকেয়া আছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হিসাবকালেই বেতন বাবদ খরচ দেখাতে হবে এবং বকেয়া বেতন আর্থিক বিবরণীর দায় পার্শ্বে যাবে।

৮। পূর্ণ প্রকাশ নীতি (Full Disclosure Principle): এই নীতি অনুসারে আর্থিক বিবরণী এমনভাবে হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারীদের নিকট উপস্থাপন করতে হবে যেন কোন অপূর্ণতা না থাকে।

৯। রক্ষণশীলতার প্রথা (Conservatism Convention): এই নীতির মূল কথা হলো প্রতিষ্ঠানের মুনাফা যেন বেশী করে দেখানো না হয়। অর্থাৎ সঠিক এবং যুক্তিসংগত মুনাফা প্রদর্শন করা হয়। যেমন, মজুদ পণ্যের ক্রয় মূল্য ও বাজার মূল্যের মধ্যে যেটি কম সেইটি হিসাবে ধরতে হবে। আবার দেনাদারের উপর যুক্তিসংগত হারে সঞ্চিতি ধরতে হবে।

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা নোট/গাইড PDF Download

Facebook
X
LinkedIn
Telegram
Print

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Stay Connected

Subscribe our Newsletter

Scroll to Top