ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী নোট/গাইড PDF Download

Advertisements

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্রের ৩য় অধ্যায় ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকে প্রতিবছর একটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকে। এই লেকচারে আলোচনা করা হয়েছে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণীর ধারণা ও উদ্দেশ্য, নগদান বই এবং ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্তের মধ্যে গড়মিলের কারণ, ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুত করার বিভিন্ন পদ্ধতি ও সকল গাণিতিক সমস্যা । আরো আছে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন তাই আমাদের লেকচার শীটটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করুন ।।

ভূমিকা

বর্তমান ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংক অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্যবসা বাণিজ্যের সকল প্রকার লেনদেনসমূহ ব্যাংকের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়ে থাকে। সুতরাং কারবারে রক্ষিত নগদান বহি এবং ব্যাংকে রক্ষিত হিসাব বিবরণী একটি নির্দিষ্ট সময়ে সমান হওয়ার কথা। কিন্তু গড়মিলের কারণে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুত করা আবশ্যক।

পাঠ-১. ব্যাংক সমন্বয় বিবরণীর ধারণা ও উদ্দেশ্য

সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে “ব্যাংক ব্যবস্থা” এক অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের লেনদেনগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে থাকে। যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে হিসাব খুলেন তাদেরকে আমানতকারী বলা হয়। ব্যাংক তার আমানতকারীকে পাশ বহি সরবরাহ করে থাকেন। কম্পিউটার যুগের পূর্বে ব্যাংক তার আমানতকারীকে পাশ বহি ইস্যু করতেন। কম্পিউটার পদ্ধতিতে হিসাব রাখার ফলে ব্যাংক এখন আর পাশ বহি সরবরাহ করে না। বর্তমানে ব্যাংক পাশ বহির পরিবর্তে ব্যাংক বিবরণী (Bank Statement) প্রদান করে থাকেন। একটি নির্দিষ্ট তারিখে কারবারে রক্ষিত নগদান বহি এবং Bank Statement এর মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়। নগদান বহির উদ্বৃত্তের (Balance) সাথে ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্তের মিলকরণের প্রয়োজন পড়ে।

ব্যাংক বিবরণী/পাশ বহি (Bank Statement/Pass Book):

আমাদের দেশে অনেক ব্যাংক আছে। যেমন: সোনালী ব্যাংক লিঃ, অগ্রণী ব্যাংক লিঃ, জনতা ব্যাংক লি: ইত্যাদি। যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে হিসাব খুলেন তাদেরকে আমানতকারী বলা হয়। আমানতকারী চাহিবা মাত্র তার হিসাবের বিবরণী ব্যাংক সরবরাহ করে থাকে। এই বিবরণীকেই ব্যাংক বিবরণী বলা হয়। এই বিবরণী পাশ বহির বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আবার কিছু কিছু হিসাবের ক্ষেত্রে পাশ বহি ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে আজকাল ব্যাংক বিবরণীর ব্যবহার বেশি দেখা যায়।

Advertisements

ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী (Bank Reconciliation Statement)

ব্যাংক সংক্রান্ত লেনদেনগুলো আমানতকারী তার নগদান বহিতে লিপিবদ্ধ করেন এবং ব্যাংক ঐ একই লেনদেনগুলো আমানতকারীর হিসাব বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। সংগত কারণেই নগদান বহি এবং ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্ত (ব্যালেন্স) এক হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা নাও হতে পারে। কিছু কিছু ঘটনা আছে, একটি নির্দিষ্ট তারিখে নগদান বহিতে লিপিবদ্ধ হলেও ব্যাংকের হিসাব বিবরণীতে লিপিবদ্ধ নাও হতে পারে। যেমন: আমানতকারীর চেকের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংকে জমা দেওয়া হলো যে তারিখে আমানতকারী চেক ব্যাংকে জমা দিবেন ঐ দিনই তিনি নগদান বহিতে এন্ট্রি দিবেন। কিন্তু ব্যাংক যে তারিখে চেকের টাকা আদায় করেন সেই তারিখে আমানতকারীর হিসাব বিবরণীর ক্রেডিট পার্শ্বে এন্ট্রি দিয়ে থাকেন। এ জন্যই নগদান বহির সাথে ব্যাংকের হিসাব বিবরণীর গড়মিল দেখা দেয়। কোন নির্দিষ্ট তারিখে নগদান বহির উদ্বৃত্ত এবং ব্যাংকের হিসাব বিবরণীর উদ্বৃত্তের গড়মিলের কারণ দেখিয়ে যে মিলকরণ বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাকে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী (Bank Reconciliation Statement) বলে।

ব্যাংক সমন্বয় বিবরণীর উদ্দেশ্য (Objectives of Bank Reconciliation Statement)

১। গড়মিলের কারণ নির্ণয়: ব্যাংক আমানতকারীর হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করেন। কাজেই আমানতকারীর নগদান বহির “ব্যাংক কক্ষের” উদ্বৃত্তের সাথে ব্যাংকে রক্ষিত “হিসাব বিবরণীর” উদ্বৃত্তের সাথে মিল হওয়ার কথা। কিছু কিছু লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখে উভয় বহির সাথে গড়মিল দেখা দেয়। যেমন আমানতকারী কর্তৃক চেকের টাকা আদায়ের জন্য জমা, ব্যাংক চার্জ এবং মঞ্জুরীকৃত সুদ প্রভৃতি। যে সমস্ত এন্ট্রির জন্য গড়মিল দেখা দেয় তা খুঁজে বের করে সমন্বয় করা প্রয়োজন।

২। প্রকৃত ব্যাংক জমার উদ্বৃত্ত নির্ণয়: নগদান বহির ব্যাংক কক্ষের উদ্বৃত্তের সাথে ব্যাংকে রক্ষিত হিসাব বিবরণীর উদ্বৃত্তের গড়মিলের এন্ট্রিগুলো সমন্বয়পূর্বক প্রকৃত ব্যাংক জমার উদ্বৃত্ত নির্ণয় করা হয়।

৩। হিসাবের গাণিতিক নির্ভুলতা: যেহেতু কিছু কিছু এন্ট্রির জন্য দুই বহির গড়মিল পরিলক্ষিত হয় সেই এন্ট্রিগুলো সমন্বয় পূর্বক হিসাবের গাণিতিক নির্ভুলতা প্রমাণ করা যায়।

৪। অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণ: অভ্যন্তরীন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রধান উদ্দেশ্য।

৫। নিরীক্ষা কার্যে সহায়তা: হিসাব শুদ্ধভাবে রক্ষিত না হলে নিরীক্ষা কার্য সম্পাদন করা যায় না। কাজেই ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুতের মাধ্যমে নিরীক্ষা কার্য সম্পাদন করা সহজতর হয়।

৬। ভুল ত্রুটি উৎঘাটন: নগদান বহি এবং ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্তের মধ্যে যে সকল এন্ট্রির জন্য পার্থক্য দেখা দেয় তা খুঁজে বাহির করা সহজ হয়। ভুল ত্রুটি উৎঘাটন করে সমন্বয় করাই এই বিবরণীর মুখ্য উদ্দেশ্য।

৭। নিখুঁত আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত: ভুল ত্রুটি সমন্বয়পূর্বক নিখুঁত আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করাই ইহার মুখ্য উদ্দেশ্য।

৮। ভুল বুঝাবুঝির অবসান: আমানতকারী ও ব্যাংক কর্মকর্তা একত্রে বসে নগদান বহির উদ্বৃত্তের সাথে ব্যাংকে রক্ষিত হিসাব বিবরণীর উদ্বৃত্তের গড়মিলের কারণগুলো বিশ্লেষণপূর্বক সমন্বয় সাধন করে থাকেন। এতে করে উভয়ের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটে।

আরো পড়ুন :

পাঠ-২. নগদান বই এবং ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্তের মধ্যে গড়মিলের কারণ

নগদান বহি এবং ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্তের মধ্যে গড়মিলের কারণ: আমানতকারী তার ব্যাংক সংক্রান্ত লেনদেনগুলো নগদান বহিতে ব্যাংক কলামে লিপিবদ্ধ করেন। অনুরূপভাবে ব্যাংকও ঐ লেনদেনগুলো মক্কেলের হিসাব বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করে থাকেন। কোন নির্দিষ্ট তারিখে নগদান বহির ব্যাংক কলামের উদ্বৃত্ত এবং মক্কেলের হিসাব বিবরণীর উদ্বৃত্ত সমান হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবে নাও হতে পারে।

যে সমস্ত কারণে দুইটি হিসাবে গড়মিল দেখা দেয় তা নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ

১। জমাকৃত চেক: আমানতকারী চেকের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংকে প্রেরণ করলে তিনি তার নগদান বহির ব্যাংক কলামের ডেবিট পার্শ্বে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। ফলে নগদান বহিতে ব্যাংক ব্যালেন্স বেড়ে যায়। কিন্তু ব্যাংক উক্ত চেকের টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত মক্কেলের হিসাব বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করেন না। এ জন্যই দুইটি হিসাবের পার্থক্য দেখা দেয়।

২। ইস্যুকৃত চেক: আমানতকারী কোন কারণে পাওনাদারকে চেক ইস্যু করলে তিনি তার নগদান বহির ব্যাংক কলামের ক্রেডিট পার্শ্বে লিপিবদ্ধ করেন। ফলে নগদান বহির ব্যাংক উদ্বৃত্ত কমে যায়। পাওনাদার উক্ত চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন না করা পর্যন্ত ব্যাংক তার মক্কেলের হিসাব বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করতে পারেন না। কাজেই দুইটি হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।

৩। ব্যাংক কর্তৃক সরাসরি আদায়: ব্যাংক আমানতকারীর পক্ষে লভ্যাংশ, বিনিয়োগের সুদ, প্রাপ্য হিসাবের টাকা সরাসরি আদায় করে আমানতকারীর হিসাবে ক্রেডিট করে অর্থাৎ ব্যাংকে আমানতকারীর জমা টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু আমানতকারী এই ঘটনা না জানা পর্যন্ত তার নগদান বহির ব্যাংক কলামে ডেবিট করতে পারেন না। ফলে এই দুই হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।

৪। ব্যাংক কর্তৃক সরাসরি পরিশোধ: ব্যাংক আমানতকারীর পক্ষ হয়ে বা তার স্থায়ী নির্দেশে প্রদেয় হিসাবের টাকা, গ্যাস বিল, পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি পরিশোধ করে মক্কেলের হিসাবে ডেবিট করে দেয় অর্থাৎ আমানতকারীর ব্যাংক ব্যালেন্স কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমানতকারী এই ঘটনা না জানা পর্যন্ত তার নগদান বহির ব্যাংক কলামে ক্রেডিট করতে পারেন না। ইহার ফলে এই দুই হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।

৫। ব্যাংকে জমাকৃত চেক ও প্রাপ্য নোটের অমর্যাদা: প্রাপ্য নোট এবং চেকের টাকা আদায়ের জন্য আমানতকারী তার ব্যাংকে জমা দিলে তিনি তার নগদান বহির ব্যাংক কলামে ডেবিট করে থাকেন। কিন্তু উক্ত নোট এবং চেকের টাকা আদায় না হলে ব্যাংক আমানতকারীর হিসাবে লিপিবদ্ধ করেন না। ফলে এই দুইটি হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।

৬। প্রদেয় নোট ও ইস্যুকৃত চেকের অমর্যাদা: প্রদেয় নোট পরিশোধের জন্য ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হলে বা চেক ইস্যু করা হলে আমানতকারী তার নগদান বহির ব্যাংক কলামের ক্রেডিট পার্শ্বে এন্ট্রি দিয়ে থাকেন। কিন্তু ব্যাংক উক্ত নোট এবং চেকের টাকা পরিশোধ না করলে অর্থাৎ আমানতকারীর হিসাবে ডেবিট না করলে উক্ত দুটি হিসাবের মধ্যে গড়মিল দেখা দেয়।

৭। মঞ্জুরীকৃত সুদ: আমানতকারীর ব্যাংক হিসাবে যে উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে জমা থাকে এই জমাকৃত টাকার উপর নির্দিষ্ট হারে ব্যাংক সুদ মঞ্জুর করে তার হিসাবে ক্রেডিট করে থাকেন। এই ঘটনাটি আমানতকারী না জানা পর্যন্ত তার নগদান বহির ব্যাংক কলামে ডেবিট করেন না। ফলে দুইটি বহির মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয়।

৮। ব্যাংক চার্জ: ব্যাংক আমানতকারীকে সেবা প্রদান করে থাকেন। এই সেবার বিনিময়ে তার হিসাব হতে কিছু টাকা কর্তন করে নেয় অর্থাৎ আমানতকারীর হিসাবে ডেবিট করে। এই ঘটনাটি আমানতকারী না জানা পর্যন্ত তার নগদান বহির ব্যাংক কলামে ক্রেডিট করতে পারেন না। ফলে উভয় বহির মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয়।

৯। নগদান বহি বা ব্যাংক বিবরণীর ভুল: আমানতকারী তার নগদান বহিতে ভুল অংক লিখলে বা একই ঘটনা দু’বার লিখলে গড়মিল দেখা দিবে। আবার ব্যাংক আমানতকারীর হিসাবে ভুল অংক লিখলে বা একই ঘটনা দু’বার লিখলে গড়মিল দেখা দিবে।

১০। অনলাইন লেনদেন: অনলাইন লেনদেনের ফলে গড়মিল দেখা দেয়।

১১। ভুলবশত: অন্য কোন হিসাবের টাকা আমানতকারীর হিসাবে জমা বা ভুলবশতঃ খরচ দেখালে গড়মিল দেখা দেয়।

পাঠ-৩. ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুত করার বিভিন্ন পদ্ধতি

ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুত করার বিভিন্ন পদ্ধতি

ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুতের সময় “তারিখ” একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে তারিখ পর্যন্ত ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী তৈরী করতে হবে সেই তারিখ পর্যন্ত নগদান বহি এবং ব্যাংক বিবরণী (Bank Statement) পাশাপাশি রেখে গড়মিলের কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। অতঃপর গড়মিলের দফাসমূহ দ্বারা সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে।

এই সমন্বয় বিবরণী নিম্নলিখিতভাবে করা যেতে পারে।

১। প্রচলিত পদ্ধতি (Traditional Method)

২। দ্বৈত জের শুদ্ধকরণ পদ্ধতি (Double Balance Correction Method)

৩। নগদ জের সংশোধনী পদ্ধতি (Cash Balance Amendmend Method)

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী নোট/গাইড PDF Download

Facebook
X
LinkedIn
Telegram
Print

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Stay Connected

Subscribe our Newsletter

Scroll to Top