বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

বাংলা ভাষার (ব্যাকরণ) উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ | PDF

Advertisements

বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ: বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ একটি দীর্ঘ এবং ধীরপ্রবাহী প্রক্রিয়া। প্রাচীন বাংলা ভাষার মূল উৎস ছিল সংস্কৃত এবং প্রাকৃত ভাষা, যা ইন্দো-আর্য ভাষা পরিবারের অংশ। সপ্তম শতাব্দী থেকে বাংলা ভাষার প্রথম নিদর্শনগুলো দেখা যায়, তবে ১২-১৩ শতক পর্যন্ত এটি পুরোপুরি একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে পরিচিতি পায়। মুসলিম শাসনামলে আরবি ও ফারসি ভাষার প্রভাব বাংলা ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে। ১৮শ শতকের শেষ দিকে, বাংলা ব্যাকরণ রচনার মাধ্যমে ভাষার নিয়মকানুন স্থির করা হয়। এরপর আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ বিকশিত হতে থাকে, যা আজকের বাংলা ভাষার ভিত্তি।


বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

১। মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে দুই ভাবে। যথা- কণ্ঠ্যধ্বনি ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে।

২। কণ্ঠ্যধ্বনি বা কথা বলার মাধ্যমে সবচেয়ে সহজে মনের ভাব প্রকাশ পায়।

৩। ভাষার মূল উপাদান / ক্ষুদ্রতম উপাদান হলো ধ্বনি/ বর্ণ।

Advertisements

৪। মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশ করতে পারে কণ্ঠ্যধ্বনির মাধ্যমে।

৫। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য।

৬। বাক্যের মূল উপাদান/ ক্ষুদ্রতম উপাদান ধ্বনি/বর্ণ।

৭। বাক্যের মূল উপকরণ শব্দ।

৮। ধ্বনির সাহায্যে ভাষার সৃষ্টি হয়।

৯। বাগযন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনির সৃষ্টি হয়।

১০। অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে বলে ভাষা।

১১। মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত বাক সংকেতের সংগঠনকে বলে ভাষা।

১২। বাংলাদেশের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বাংলা।

১৩। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের কয়েকটি অঞ্চলের ভাষা বাংলা।

১৪। পৃথিবীর সবভাষার উপভাষা আছে। (বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ)

১৫। দেশের শিক্ষিত ও পণ্ডিতসমাজ একটি আদর্শ ভাষা ব্যবহার করেন।

১৬। বাংলা ভাষাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- মৌখিক ও লৈখিক ।

১৮। মৌখিক ভাষাকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- চলিত ও আঞ্চলিক।

১৯। লৈখিক ভাষাকেও আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- সাধু ও চলিত।

২০। ভাষা সৃষ্টির মূল উৎস বাগযন্ত্র।

২১। ভাষার পরিবর্তন ঘটে তিনভাবে।

২২। দেশ, কাল ও পরিবেশ ভেদে ভাষার পরিবর্তন ঘটে।

২৩। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৩৫০০ এর বেশি ভাষা প্রচলিত আছে।

২৪। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর ৭ম ভাষা।

২৫। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ প্রকাশিত এথনোলগ এর ২৩ তম সংস্করণ অনুযায়ী

২৬। মাভাষার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর চতুর্থ ভাষা।

২৭। দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্থান ১০ম।

২৮। বর্তমানে প্রায় ৩০ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা।

২৯। আঞ্চলিক ভাষার অপর নাম উপভাষা।

৩০। ভাষার মূল উপাদান / ক্ষুদ্রতম উপাদান হলো ধ্বনি/ বর্ণ।

৩১। সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ লেখ্য ভাষা হলো সাধু ভাষা।

৩২। সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ মৌখিক ভাষা হলো চলিত ভাষা।

৩৩। সাধু রীতির পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট।

৩৪। সুনির্ধারিত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ করে- সাধু রীতি।

৩৫। সাধু রীতি- তৎসম শব্দ বহুল।

৩৬। নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার জন্য অনুপযোগী- সাধু রীতি। সাধু রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ বিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে। এ পদ্ধতিতে অব্যয় পদটির দীর্ঘরূপ হয় না।

৩৭। ‘সাধু ভাষা’ পরিভাষাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

৩৮। পরিবর্তনশীল রীতি- চলিত রীতি।

৩৯। চলিত রীতি- তদ্ভব শব্দ বহুল।

৪০। নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার জন্য উপযোগী- চলিত রীতি।

৪১। সর্বপ্রথম চলিত ভাষার ব্যবহার করেন- প্রমথ চৌধুরী তাঁর সম্পাদিত ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায় ১৯১৪ সালে। তিনি বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক।

বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ছক

৪২। সাধুরীতি থেকে চলিত রীতিতে পরিবর্তনের কতগুলো সাধারণ সূত্রঃ

(১) ক্রিয়াপদের মধ্যস্থিত ‘ই’ স্বরধ্বনি চলিত রীতিতে লোপ পায়। যেমন খাইব > খাব।
(২) ক্রিয়াপদের মধ্যে যদি ‘উ’ স্বরধ্বনি থাকে, তাহলে চলিত রীতিতে তা লোপ পায়। যেমন – যাউক > যাক।
(৩) পদের শেষে ‘অ’, ‘আ’, ‘এ’ থাকলে পূর্ববর্তী ‘আ’ স্বরধ্বনি ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। যেমন – বিকাল > বিকেল।
(৪) পদের শেষে ‘অ’, ‘আ’, ‘এ’ থাকলে পূর্ববর্তী ‘উ’ স্বরধ্বনি ‘ও’- তে রূপান্তরিত হয়। যেমন- উঠে > ওঠে।
(৫) পূর্ববর্তী ‘ই’ স্বরধ্বনির প্রভাবে চলিত রীতিতে ‘আ’ ধ্বনি ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। যেমন- দিয়া > দিয়ে।
(৬) পদের পূর্বে ‘উ/ঊ’ থাকলে চলিত রীতিতে শেষের ‘আ’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ও’ হয়। যেমন জুতা > জুতা।

৪৩। সর্বনাম পদের রূপের পার্থক্যঃ

সাধু ⇨ চলিত

আপনকার ⇨ আপনার
আমায় ⇨ আমাকে
এইক্ষণ ⇨ এখন
মদীয় ⇨ আমার
তদীয় ⇨ তোমার
ত্বদীয় ⇨ তার
যে কোনও ⇨ যে কোনো

৪৪। ক্রিয়া পদের রূপের পার্থক্যঃ

সাধু ⇨ চলিত

দেখিয়া ⇨ দেখে
করিলেন ⇨ করলেন
হইলে ⇨ হলে
শুনিয়া ⇨ শুনে
করতেছে ⇨ করছে
বলিয়াছে ⇨ বলেছে

৪৫। বিশেষণ শব্দ ব্যবহারে সাধু ও চলিতের মধ্যে পার্থক্যঃ

সাধু ⇨ চলিত

সাতিশয় ⇨ অত্যন্ত
বহুতর ⇨ নানারকম
তাদৃশ ⇨ তারমতো
এরূপ ⇨ এরকম
যেসকল ⇨ যেসব


আরো দেখুন:


বহুনির্বাচনী প্রশ্ন: বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ (নিজে কর)

১. মানুষের মনের ভাব প্রকাশের প্রধান বাহন কোনটি?

ক) ইশারা-ইঙ্গিত
খ) চিত্র
গ) ভাষা
ঘ) আচরণ

২). পৃথিবীতে বর্তমানে কতগুলো ভাষা প্রচলিত রয়েছে?

ক) প্রায় পাঁচ হাজার
খ) প্রায় সাড়ে তিন হাজার
গ) প্রায় আড়াই হাজার
ঘ) প্রায় দেড় হাজার

৩) দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে পৃথিবীতে বাংলা ভাষার স্থান কততম?

ক) ৬ষ্ঠ
খ) ৭ম
গ) ৯ম
ঘ) ১০ম

৪. দেশ-কাল ও পরিবেশভেদে কোনটির পার্থক্য ঘটে?

ক) ধ্বনির
খ) ভাষার
গ) অর্থের
ঘ) শব্দের
৫) সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ লেখ্য ভাষা কোনটি?

ক) সাধু ভাষা
খ) চলিত ভাষা
গ) আঞ্চলিক ভাষা
ঘ) উপভাষা

৬) চলিত রীতি কোন শব্দ বহুল??

ক) তৎসম শব্দ
খ) অর্ধ তৎসম শব্দ
গ) তদ্ভব শব্দ
ঘ) দেশি শব্দ

৭) ‘সাধু ভাষা’ পরিভাষাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন কে?

ক) রাজা রামমোহন রায়
খ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
গ) প্রমথ চৌধুরী
ঘ) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

৮) বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক কে?

ক) প্রথম চৌধুরী
খ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
গ) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ঘ) প্রমথ চৌধুরী

৯) কোন ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে?

ক) ভারতীয় আর্য
খ) সংস্কৃত ভাষা
গ) ইন্দো-ইউরোপীয়
ঘ) বঙ্গ-কামরূপী

১০) ‘তথাপি’ শব্দের চলিত রূপ কোনটি?

ক) তবু
খ) অত্যন্ত
গ) অতএর
ঘ) তাই


বাংলা ভাষার (ব্যাকরণ) উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ | বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ লেকচার শীট পিডিএফ ডাউনলোড কর।

Facebook
X
LinkedIn
Telegram
Print

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Stay Connected

Subscribe our Newsletter

Scroll to Top