প্রাপ্য হিসাবসমূহের হিসাবরক্ষণ

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র প্রাপ্য হিসাবসমূহের হিসাবরক্ষণ নোট/গাইড PDF Download

Advertisements

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্রের ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রাপ্য হিসাবসমূহের হিসাবরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকে প্রতিবছর একটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকে। এই লেকচারে আলোচনা করা হয়েছে প্রাপ্য হিসাবসমূহের হিসাবরক্ষণ: প্রাপ্য হিসাব ও এর প্রকারভেদ, অনাদায়ী পাওনা ও সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতির ধারণা। আরো আছে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন তাই আমাদের প্রাপ্য হিসাবসমূহের হিসাবরক্ষণের লেকচার শীটটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করুন ।।

ভূমিকা: প্রাপ্য হিসাবসমূহের হিসাবরক্ষণ

আমরা জানি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য অর্থ প্রয়োজন। অর্থ হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকা শক্তি। এ অর্থের বিভিন্ন উৎসের মধ্যে একটি উৎস হলো প্রাপ্য টাকা। এটি সাধারণত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ধারে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহ ঠিক রেখে নগদ টাকা আদায় ও নতুন প্রাপ্য হিসাব সৃষ্টির জন্য একটি কার্যকর ক্রেডিট পলিসি আবশ্যক।

পাঠ- ১. প্রাপ্য হিসাব ও এর প্রকারভেদ

প্রাপ্য হিসাব

প্রাপ্য শব্দ দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে পাওনার পরিমাণকে বুঝায়। এটি সাধারণত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ধারে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। এসব প্রাপ্য হিসাব ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কার্যাবলির কারণেই হয়ে থাকে। এর দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট দাবীকে বুঝায় যা পরবর্তী যে কোনো সময় নগদে আদায় করা হবে। প্রাপ্য হিসাব আদায়কাল বিভিন্ন মেয়াদি হয় যেমন ৩০ দিন, ৬০ দিন ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ রীতা ট্রেডার্স ৫০,০০০ টাকায় পণ্য নেত্র ট্রেডার্সের নিকট ধারে বিক্রয় করল। নেত্র ট্রেডার্স ৬০ দিন পরে এ ক্রীত পণ্যের পাওনা অর্থ পরিশোধ করবে মর্মে নিশ্চয়তা দিল। এক্ষেত্রে রীতা ট্রেডার্স এর প্রাপ্য হিসাবে টাকার পরিমাণ হবে ৫০,০০০ টাকা। এ প্রাপ্য হিসাবের টাকা রীতা ট্রেডার্স, নেত্র ট্রেডার্স এর নিকট থেকে ২ মাস পরে নগদে আদায় করবে। প্রাপ্য হিসাবকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের তরল সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।

অবশেষে বলা যায় যে, ধারে পণ্য বা সেবা বিক্রয় বা সরবরাহের জন্য ক্রেতা যখন বিক্রেতাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধের জন্য যে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন তাকে প্রাপ্য হিসাব বলে।

Advertisements

প্রাপ্য হিসাবের প্রকারভেদ

প্রাপ্যসমূহ হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রাপ্য অর্থ যা সচরাচর ধারে পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। এ প্রাপ্য হিসাব সাধারণত প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব বা চলতি সম্পত্তি। এ সমস্ত চলতি সম্পদ থেকে সাধারণত এক বছর বা তার কম সময়ের মধ্যে নগদ টাকা পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হয়।

প্রাপ্য হিসাবকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

১. প্রাপ্য হিসাব (Account receivable),

২. প্রাপ্য নোট (Notes receivable),

৩. অন্যান্য প্রাপ্য হিসাব (Others receivable)

প্রাপ্য হিসাব (Account receivable): প্রাপ্য হিসাব হলো ধারে পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদানের প্রেক্ষিতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রাপ্য অর্থ। এ ধরণের প্রাপ্য হিসাবের আদায় মেয়াদ বিভিন্ন মেয়াদী হয়ে থাকে। প্রাপ্য হিসাব এর টাকা সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আদায় করা যাবে বলে ধরে নেয়া হয়। প্রাপ্য হিসাবের উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আফনানের নিকট ধারে পণ্য বিক্রয় ৫০,০০০ টাকা। এখানে ধারে বিক্রয় বাবদ আফনানের নিকট পাওনা ৫০,০০০ টাকা প্রাপ্য হিসাব।

প্রাপ্য নোট (Notes receivable): সাধারণত ধারে পণ্য বিক্রয় বা সেবাদানের মাধ্যমে প্রাপ্য হিসাবের সৃষ্টি হয়। এ সমস্ত প্রাপ্য হিসাবের বিপরীতে পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য আনুষ্ঠানিক লিখিত প্রতিশ্রুতিকে প্রাপ্য নোট বলে। যেমন- সাকিবের নিকট ধারে পণ্য বিক্রয়ের জন্য ৩ মাস মেয়াদি ২০,০০০ টাকার প্রাপ্য নোট পাওয়া গেল। এ প্রাপ্য নোট ব্যবসায়িক পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের বাইরেও বিভিন্ন কারণে এ ধরনের নোট সৃষ্টি হতে পারে। এটি হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের শর্তহীন লিখিত অঙ্গীকারনামা। প্রাপ্য নোটের আদায় মেয়াদ ৩০ দিন থেকে ৯০ দিন বা তদুর্ধ্ব সময়ের জন্য হয়ে থাকে। প্রাপ্য নোটের ধারক মেয়াদ পূর্তির পূর্বে প্রয়োজন হলে ব্যাংক থেকে প্রাপ্য নোট বাট্টাকরণের মাধ্যমে নগদ টাকা সংগ্রহ করতে পারে।

অন্যান্য প্রাপ্য হিসাব (Others receivable): অন্যান্য প্রাপ্যসমূহের মধ্যে সকল প্রকার অকারবারি প্রাপ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।

যেমন: প্রাপ্য সুদ, প্রাপ্য কমিশন, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণকে প্রদত্ত ঋণ, কর্মচারীগণকে প্রদত্ত অগ্রিম ইত্যাদি অন্যান্য প্রাপ্য হিসাবের উদাহরণ। এগুলো স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম দ্বারা সৃষ্টি হয় না বলে এদেরকে আলাদা দফা হিসেবে আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে দেখানো হয়।

আরো পড়ুন :

পাঠ-২. অনাদায়ী পাওনা ও সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতির ধারণা

অনাদায়ী পাওনা

বর্তমানে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে, বেড়েছে প্রতিযোগিতা। প্রতিটি ব্যবসায়ীর লক্ষ্য থাকে মুনাফা অর্জন। এ মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিটি ব্যবসায়ীকেই নগদ বিক্রয়ের পাশাপাশি ধারে পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করতে হয়। এ ধারে বিক্রয়ের ফলে সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রাপ্য হিসাবের সৃষ্টি হয়। ধারে পণ্য বিক্রয়ের সময় বিক্রেতা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ক্রেতার ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা যাচাই করে। তবুও বিভিন্ন কারণে দেনাদারের নিকট হতে সম্পূর্ণ টাকা আদায় করা যায় না। এর কারণস্বরূপ খরিদ্দারের দেউলিয়াত্ব, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, ব্যবসা বন্ধ, আকস্মিক মৃত্যু কিংবা টাকা প্রদানের অনিচ্ছাকে দায়ী করা হয়।

তাই বলা যায় যে, সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে দেনাদারের নিকট হতে যে পরিমাণ অর্থ আর আদায় করা যাবে না, তাকে অনাদায়ী পাওনা বলে। এ অনাদায়ী পাওনা বিশদ আয় বিবরণীতে পরিচালন খরচ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

উদাহরণস্বরূপ আফিক ট্রেডার্স এর ২০১৫ সালের মোট ধারে বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১০,০০,০০০ টাকা। এর মধ্যে ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫ তারিখে প্রাপ্য হিসাবের পরিমাণ ছিল ৩,০০,০০০ টাকা। পরবর্তীতে দেখা গেলো উল্লেখিত প্রাপ্য হিসাবের মধ্য থেকে একজন প্রাপ্য হিসাবধারী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তার নিকট প্রাপ্য টাকার পরিমাণ ছিল ১০,০০০ টাকা। এ টাকা আর পাওয়া যাবে না বিধায় এটি অনাদায়ী পাওনা হিসেবে গণ্য হবে।

অনাদায়ী ও সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতি

ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের ফলে ধারে ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ বেড়েছে। ধারে বিক্রয় হতে সৃষ্ট প্রাপ্য হিসাবের টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে জটিলতা, অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। ফলে প্রয়োজনের সময় প্রাপ্য হিসাবের নিকট হতে কাঙ্খিত অর্থ আদায় নাও হতে পারে। এরূপ পরিস্থিতি হলে প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ধরণের আকস্মিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কারবারে সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কৌশল অবলম্বন করে। এ কৌশলটি হলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অনাদায়ী ও সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতি রাখা।

ব্যবসায়িক পরিক্রমায় দেখা যায় যে, অনেক প্রাপ্য হিসাবের নিকট হতে প্রাপ্য টাকা আদায় করা যাবে কি না এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত কিংবা সন্দেহমুক্ত হতে পারে না। এ ধরনের প্রাপ্য হিসাবধারীগণ তাদের টাকা পরিশোধ করতেও পারে আবার নাও করতে পারে। আর এ অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যে সঞ্চিতির ব্যবস্থা করা হয়, তাই অনাদায়ী ও সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতি।

অতএব, অনাদায়ী পাওনাজনিত ক্ষতিপুরণের জন্য যদি লাভের কিছু অংশ পৃথকভাবে সংরক্ষণ করা হয় তাহলে ঐ সংরক্ষিত অর্থই অনাদায়ী ও সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতি। এটিকে ব্যবসায়ের সম্ভাব্য ক্ষতির বিপক্ষে আগাম ব্যবস্থা বলে।

প্রাপ্য হিসাবসমূহের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ

Issues associated with account receivable বা ধারে সেবা প্রাপ্তির জন্য ক্রেতা যখন বিক্রেতাকে টাকা পরিশোধের যে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেয় তখন তাকে প্রাপ্য হিসাব বলে। প্রাপ্য হিসাবসমূহ বিভিন্ন মেয়াদি হয়ে থাকে। প্রাপ্য হিসাব বা প্রাপ্য নোট হিসাবরক্ষণের কয়েকটি মৌলিক বিষয় নিম্নে উল্লেখপূর্বক আলোচনা করা হলো

১. প্রাপ্য হিসাবসমূহের শনাক্তকরণ (Recognizing account receivable): ধারে পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদানের ফলেই প্রাপ্য হিসাবের সৃষ্টি হয়। যখন পণ্যের মালিকানা বিক্রেতার নিকট থেকে পণ্য ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হয়, তখনই প্রাপ্য হিসাবসমূহ লিপিবদ্ধকরণের জন্য চিহ্নিত করতে হয়।

২. প্রাপ্য হিসাবসমূহের পরিমাণ নির্ধারণ (Valuing of account receivable): প্রথমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য হিসাবসমূহকে সঠিকভাবে এবং সঠিক পরিমাণ শনাক্ত করতে হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ হলো প্রাপ্য হিসাবকে আর্থিক বিবরণীতে দেখানো হবে।

৩. প্রাপ্য হিসাবসমূহের অবসায়ন (Disposing account receivable): ব্যক্তি বা কারবার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নগদে পণ্য ক্রয় করে বাকীতে পণ্য বিক্রয় করার কার্যই মূলত প্রাপ্য হিসাবের উৎপত্তি। এটি বিভিন্ন মেয়াদি হয়ে থাকে। সাধারণত প্রাপ্য হিসাবসমূহের নিকট হতে অর্থ আদায় করতে বেশ কয়েক মাস সময় লেগে যায়। অনেক সময় কোম্পানিসমূহ নগদ অর্থের অত্যধিক প্রয়োজনের লক্ষ্যে প্রাপ্য হিসাবসমূই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করে দেয়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্থ গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রাপ্য হিসাবসমূহের অবসায়ক বলে।

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র প্রাপ্য হিসাবসমূহের হিসাবরক্ষণ নোট/গাইড PDF Download

Facebook
X
LinkedIn
Telegram
Print

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Stay Connected

Subscribe our Newsletter

Scroll to Top