প্রাচীন যুগের ইতিহাস (৬৫০-১২০০ খ্রি): বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের ইতিহাস প্রায় ১০০০ বছর আগে শুরু হয়। এটি রচিত হয় সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত এবং বাংলা ভাষায়। প্রাচীন যুগের সাহিত্য প্রধানত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তুর উপর ছিল। প্রথম দিকে বাংলা সাহিত্যে ধর্মীয় গীতিকা, স্তোত্র ও পুরাণের প্রভাব ছিল। পাল রাজবংশের সময় “বোধিবৃক্ষ”, “বুদ্ধদর্শন” ইত্যাদি গ্রন্থ রচিত হয়। এর পর, বাংলা কবিতা ও কাব্যগ্রন্থের বিকাশ ঘটে, যেমন “কাব্যবলী”। প্রাচীন যুগের ইতিহাস সাহিত্যে শ্রেষ্ঠতর রচনা ছিল পুরাণ, ধর্মগ্রন্থ ও বৈষ্ণব কবিতাসমূহ। প্রাচীন যুগের ইতিহাস সম্পূর্কে আরো বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলো। তাহলে চলো, শুরু করি।
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের ইতিহাস (৬৫০-১২০০ খ্রি)
১। বাংলা সাহিত্য কালবিচারে বাংলা সাহিত্যকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।
২। ড মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ এর সময়কাল (৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ) অপরদিকে সুনীতিকুমার চট্টোপধ্যায় সহ অধিকাংশের মতে প্রাচীন যুগের বিস্তার ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
৩। প্রাচীন যুগ খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে বঙ্গদেশ মৌর্যাধিকারে আসে।
৪। মৌর্যাধিকারে আসার পর থেকে আর্যভাষা এদেশে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে।
৫। আর্যভাষা প্রভাব বিস্তার এর প্রায় সহস্রাব্দ পরে প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়।
৬। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে প্রত্যেক অধ্যায়ের শুরুতে সুর তাল লয় বিশিষ্ট একটি পদ থাকতো সেটিকে “ধুয়া” বলে।
৭। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এর জীবনকাল (১৮৫৩-১৯৩১)
৮। বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ।
৯। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের পদগুলো আবিষ্কার করেন। তাকে “মহামহোপাধ্যায়” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১০। চর্যাপদের পদগুলো মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
১১। চর্যাপদ আবিস্কার হয় ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে।
১২। চর্যাপদের পুথিগুলো বই আকারে প্রকাশ পায় ১৯১৬ সালে। (আবিষ্কারের ৯ বছর পর)
১৩। ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে চর্যাপদের পুথিগুলো বই আকারে প্রকাশ পায়।
১৪। চর্যাপদের পদগুলির রচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত।
১৫। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, চর্যাপদের রচনাকাল ৬৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ।
১৬। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে রচনাকাল ৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ।
১৭। চর্যাপদ রচিত হয় পাল আমলে। (প্রাচীন যুগের ইতিহাস)
১৮। চর্যাপদের পদসংখ্যা ৫০ টি ড শহিদুল্লাহ এর মতে। তবে ড সুনীতি কুমারের মতে -৫১ টি
১৯। চর্যাপদের পদকর্তা হিসেব পাওয়া যায় মোট ২৩ জন, মতান্তরে ২৪ জনের পরিচয়।
২০। চর্যাপদের ভাষাকে বলা হয় “সন্ধ্যা’ বা “সান্ধ্য” ভাষা। এ ভাষা কোথাও স্পষ্ট, কোথাও অস্পষ্ট।
২১। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তার বিখ্যাত “The Origin and Development of the Bengal Language” নামক গ্রন্থে প্রথম প্রমাণসহ উল্লেখ করেন চর্যাপদ বাংলা ভাষায় রচিত।
২২। চর্যাপদকর্তাদের নামের শেষে যোগ করা হয়েছে গৌরবসূচক পা (পদ রচনার জন্য)।
২৩। চর্যাপদের সবচেয়ে বেশি পদের রচয়িতা কাহ্নপা। মোট ১৩ টি পদ রচনা করেছেন। ১২ টি পাওয়া গেছে।
২৪। চর্যাপদের আধুনিকতম পদকর্তা সরহপা অথবা ভুসুকুপা।
২৫। চর্যাপদের প্রথম পদটির রচয়িতা লুইপা।
২৬। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের পদ রয়েছে ৫০টি।
২৭। প্রাপ্ত পদ সাড়ে ছেচল্লিশটি (৪৬.৫টি)
২৮। চর্যাপদের যেসব পদ পাওয়া যায়নি (২৩ নং খন্ডিত আকারে পাওয়া গেছে), কাহ্নপা এর ২৪নং, তন্ত্রীপা এর ২৫ নং ও কুক্কুরীপা এর ৪৮নং পদ। (প্রাচীন যুগের ইতিহাস)
২৯। চর্যার অনেকগুলো পদ মূলত গানের সংকলন।
৩০। চর্যাপদের ভাষাকে সন্ধ্যা ভাষা বা সান্ধ্য ভাষা বলে। চর্যাপদের কবিতাগুলো লেখা মাত্রাবৃত্ত ছন্দে
৩১। চর্যাপদের প্রাচীন কবি শবরপা ছিলেন বাঙালি। ভুসুকপাও নিজেকে বাঙালী বলে পরিচয় দেন।
৩২। চর্যাপদের একমাত্র মহিলা কবি হিসেবে কুকুরীপার কথা জানা যায়।
৩৩। বেশিরভাগ পণ্ডিতগণের মতে ভুসুকুপাকে বাঙালি কবি বলে গণ্য করা হয়।
৩৪। প্রথম বাঙালি কবি হিসেবে পূর্ণাঙ্গ পদ রচনা করেন লুইপা।
৩৫। চর্যাপদে বৌদ্ধ সহজিয়াদের ধর্মতত্ত্ব ও সাধন-ভজনমূলক ৪৭টি পদ আছে
৩৬। পদগুলোর সুনির্ধারিত তাল, রাগ ও সুরে গীত হওয়ার উপযোগী।
৩৭। পদগুলোর ভাব ও ভাষা সর্বত্র সহজবোধ্য নয়;
৩৮। ব্যঞ্জনাময় শব্দ-ব্যবহার, উপমা-রূপকাদি অলঙ্কারের প্রয়োগ, প্রাকৃতিক বর্ণনা, সমাজচিত্র ইত্যাদি বিবেচনায় পদগুলির সাহিত্যিক ও ভাষানিদর্শনগত মূল্য অপরিসীম।
৩৯। পদগুলির পদকর্তাগণ ‘সিদ্ধাচার্য’ নামে খ্যাত।
৪০। তাঁদের কয়েকজন হলেন লুইপা, ভুসুকুপা, কাহ্নপা, শবরপা প্রমুখ।
৪১। চর্যাপদের পরে প্রবাদ, বচন, ছড়া, ডাক ও খনার বচন ইত্যাদি কিছু কিছু কাব্যনিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
৪২। তবে চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো রচনা পাওয়া যায় না।
৪৩। (১২০১-১৩৫০) ‘অন্ধকার যুগ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তখন বাংলার শাসক ছিল তুর্কীরা।
৪৫। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল পরিবর্তনের যুগ।
৪৬। ইসলাম ও ইসলামি সংস্কৃতির সংস্পর্শে এবং মুসলিম শাসকদের ভিন্নতর রাষ্ট্রীয় ও সমাজব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তখন এক নতুন পরিবেশ ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছিল। (প্রাচীন যুগের ইতিহাস)
৪৭। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ছিল সৃজ্যমান অবস্থায়।
৪৮। চর্যার বঙ্গীয়-বৈশিষ্ট্যময় অপভ্রংশ ভাষা আরও বেশি মাত্রায় বাংলা হয়ে ওঠে।
৪৯। এ যুগের প্রাপ্ত নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৩শ-১৪শ শতকের রামাই পন্ডিতের গাথাজাতীয় রচনা শূন্যপুরাণ।
৫০। শূণ্যপুরাণ এর রচয়িতা ধামাই পন্ডিত। এটি বৌদ্ধ ধর্ম তত্ব বিষয়ক গ্রন্থ।
৫১। এতে বৌদ্ধদের ওপর বৈদিক ব্রাহ্মণদের অত্যাচার, মুসলমানদের জাজপুর প্রবেশ ইত্যাদি ঘটনার বর্ণনাসম্বলিত ‘নিরঞ্জনের রুম্মা’ শীর্ষক একটি কবিতা আছে।
৫২। এছাড়া আছে অপভ্রংশ ভাষায় রচিত প্রাকৃতপৈঙ্গল নামক একটি গীতিকবিতার সংকলন, যার ছন্দ ও ভাষা প্রাকৃত বা আদি পর্যায়ের বাংলা।
৫৩। হলায়ুধ মিশ্র রচিত সেখশুভোদয়া (আনু. ১২০৩) নামক সংস্কৃত গ্রন্থেও একটি বাংলা গান পাওয়া গেছে।
৫৪। পীরমাহাত্ম্যসূচক ছড়া বা আর্যা, প্রেমসঙ্গীত এবং খনার বচন শ্রেণির দু-একটি বাংলা শ্লোকই এ সময়কার প্রধান রচনা।
আরো পড়ুন:
বহুনির্বাচনী প্রশ্নত্তোর (প্রাচীন যুগের ইতিহাস)
১) চর্যাপদ কোন চন্দে লেখা?
ক) অক্ষরবৃত্ত
খ) মাত্রাবৃত্ত
গ) গদ্য
ঘ) অমিত্রাক্ষর
উত্তর: খ
২) বাংলা সাহিত্যের যুগকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
ক) ৩
খ) ৪
গ) ৫
ঘ) ৬
উত্তর: ক
৩) চর্যাপদের আদি কবি কে?
ক) লুইপা
খ) কাহ্নপা
গ) শবরপা
ঘ) পাদ্রিপা
উত্তর: ক
৪) কোন রাজ বংশের আমলে চর্যাপদ রচনা শুরু হয়?
ক) সেন
খ) পাল
গ) মুঘল
ঘ) ইংরেজ
উত্তর: খ
৫) চর্যাপদের বেশি পদ রচনা করেন কে?
ক) লুইপয়া
খ) শবরপা
গ) সরই পা
ঘ) কাহ্নপা
উত্তর: ঘ
৬) সুকুমার সেনের মতে চর্যাপদের লেখক কয়জন?
ক) ২২
খ) ২৩
গ) ২৪
ঘ) ২৫
উত্তর: গ
৭) চর্যাপদ প্রকাশিত হয় কত সালে?
ক) ১৯০৭
খ) ১৯১১
গ) ১৯১৬
ঘ) ১৯২১
উত্তর: গ
৮) সন্ধ্যাভাষার সাথে নিচের কোনটি যুক্ত?
ক) চর্যাপদ
খ) পদাবলী
গ) শান্তিকাব্য
ঘ) রোমান্সকাব্য
উত্তর: ক
৯) বাঙ্গালীর ইতিহাস বইটি রচনা করেন কে?
ক) সুনীতি কুমার চট্টপাধ্যায়
খ) হর প্রসাদ শাস্ত্রী
গ) আর সি মজুমদার
ঘ) নীহাররঞ্জন রায়
উত্তর: ঘ
১০) অন্ধাকার যুগ বলা হয় কোন সময়কে?
ক) ৯৫০-১১১০
খ) ১২০১-১৩৫০
গ) ৬০০-৯০০০
ঘ) ১৩৫০ ১৮০০
উত্তর :খ
বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ প্রাচীন যুগ বা আদি যুগ (৬৫০-১২০০ খ্রি) | বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের ইতিহাস লেকচার পিডিএফ ডাউনলোড।