এইচএসসি পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্রের ৯ম অধ্যায় তরঙ্গের নোটটি এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যার মাধ্যমে তুমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় , মেডিকেল কলেজ পরিক্ষা ও ইন্জিনিয়ারিং পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবে । এই লেকচারে অন্তর্ভুক্ত আছে তরঙ্গের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন ঘটনাগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তরঙ্গের গতি, প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার এবং বিস্তার নিয়ে আলোচনা তরঙ্গের প্রকৃতি এবং এর প্রয়োগ বোঝার জন্য অপরিহার্য । তাই আর দেরি না করে আমাদের লেকচার শীটটি পড়ে ফেলুন ।।
তরঙ্গ (Waves) – HSC Physics 1st Paper
তরঙ্গের ধারণা (Concept of Waves)
তরঙ্গ হলো শক্তির এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালনের মাধ্যম। এতে মাধ্যমের কণাগুলোর কোনো স্থায়ী স্থানান্তর হয় না, কেবলমাত্র তারা তাদের নিজ নিজ সাম্যাবস্থা থেকে সরণ ঘটে। তরঙ্গের মাধ্যমে শক্তি ও তথ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে যায়।
তরঙ্গের প্রকারভেদ (Types of Waves)
তরঙ্গ প্রধানত দুই ধরনের:
1.যান্ত্রিক তরঙ্গ (Mechanical Waves): যান্ত্রিক তরঙ্গ হলো সেই তরঙ্গ যা কোনো মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। যেমন, শব্দ তরঙ্গ।
- অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ (Longitudinal Waves): এ তরঙ্গে কণাগুলো তরঙ্গের দিক বরাবর সরণ ঘটে। যেমন, শব্দ তরঙ্গ।
- অনুভূমিক তরঙ্গ (Transverse Waves): এ তরঙ্গে কণাগুলো তরঙ্গের দিকের লম্ব বরাবর সরণ ঘটে। যেমন, আলো তরঙ্গ।
2. তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ (Electromagnetic Waves): তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ কোনো মাধ্যম ছাড়াই শূন্যে সঞ্চালিত হতে পারে। যেমন, আলো, রেডিও তরঙ্গ।
তরঙ্গের উপাদান (Components of Waves)
তরঙ্গের কয়েকটি মূল উপাদান হলো:
- চূড়া (Crest): তরঙ্গের সর্বোচ্চ বিন্দু।
- গহ্বর (Trough): তরঙ্গের সর্বনিম্ন বিন্দু।
- অম্প্লিটিউড (Amplitude): তরঙ্গের সাম্যাবস্থা থেকে চূড়া বা গহ্বর পর্যন্ত দূরত্ব।
- তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wavelength): একটি চক্রে পরপর দুটি চূড়া বা গহ্বরের মধ্যে দূরত্ব।
- আবর্তকাল (Period, T): একটি পূর্ণ তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য সময়ের পরিমাণ।
- কম্পাঙ্ক (Frequency, f): প্রতি সেকেন্ডে সৃষ্ট তরঙ্গের সংখ্যা।
আরো পড়ুন :
তরঙ্গের গতি (Wave Speed)
তরঙ্গের গতি নির্ণয় করা যায় তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং কম্পাঙ্কের মাধ্যমে:
v = f . λ
এখানে,
v = তরঙ্গের গতি (Wave Speed)
f = কম্পাঙ্ক (Frequency)
λ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wavelength)
প্রতিধ্বনি ও প্রতিসরণ (Reflection and Refraction)
- প্রতিধ্বনি (Reflection): তরঙ্গ যখন কোনো প্রতিবন্ধকের সাথে সংঘর্ষ করে ফিরে আসে, তখন তাকে প্রতিধ্বনি বলে। উদাহরণস্বরূপ, শব্দ তরঙ্গের প্রতিধ্বনি।
- প্রতিসরণ (Refraction): তরঙ্গ যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করে, তখন তার গতি ও দিক পরিবর্তিত হয়। এ প্রক্রিয়াকে প্রতিসরণ বলে। যেমন, পানির নিচে কোনো বস্তু ভিন্নভাবে দেখা যায় প্রতিসরণের কারণে।
হুকের সূত্র (Hooke’s Law) ও স্প্রিং তরঙ্গ (Spring Waves)
হুকের সূত্র বলে, কোনো বস্তুর সরণ সরাসরি তার উপর প্রয়োগ করা বলের সাথে সমানুপাতিক। স্প্রিংয়ের ক্ষেত্রে, যদি স্প্রিংকে কোনো বল দিয়ে টেনে প্রসারিত বা সংকুচিত করা হয়, তাহলে স্প্রিং-এর বল ফিরে আসে এবং তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।
শব্দ তরঙ্গ (Sound Waves)
শব্দ তরঙ্গ হলো একটি যান্ত্রিক তরঙ্গ যা একটি মাধ্যমে (যেমন, বায়ু, জল) সঞ্চালিত হয়। এটি একটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ যেখানে মাধ্যমের কণাগুলো সংকোচন (Compression) এবং প্রসারণের (Rarefaction) মাধ্যমে সরণ ঘটে।
শব্দ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
- গতিবেগ: শব্দের গতি বিভিন্ন মাধ্যমে ভিন্ন হয়। সাধারণত বায়ুতে শব্দের গতি 343 m/s।
- শব্দের তীব্রতা ও পিচ (Intensity and Pitch): শব্দের উচ্চতা নির্ভর করে তার কম্পাঙ্কের উপর, আর তীব্রতা নির্ভর করে তার অম্প্লিটিউডের উপর।
তরঙ্গের ব্যতিচার ও বিস্তার (Interference and Diffraction)
- ব্যতিচার (Interference): যখন দুটি বা ততোধিক তরঙ্গ একে অপরের সাথে মিলিত হয়, তখন তাদের অম্প্লিটিউড যোগ হয় বা বিয়োগ হয়। এটি দুই ধরনের হয়: গঠনমূলক (constructive) ও ধ্বংসাত্মক (destructive) ব্যতিচার।
- বিস্তার (Diffraction): তরঙ্গ কোনো প্রতিবন্ধককে পার হয়ে বা ছোট ফাঁক দিয়ে যাওয়ার সময় বাঁকানো হয়। এ প্রক্রিয়াকে বিস্তার বলে।
প্রতিধ্বনি ও অনুনাদ (Resonance and Echo)
- অনুনাদ (Resonance): যখন কোনো বস্তুর প্রাকৃতিক কম্পাঙ্কের সাথে বাহ্যিক কম্পাঙ্ক মিলে যায়, তখন অনুনাদ ঘটে এবং বস্তুর কম্পন তীব্র হয়ে ওঠে।
- প্রতিধ্বনি (Echo): শব্দ তরঙ্গ কোনো প্রতিবন্ধক থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসলে প্রতিধ্বনি শোনা যায়। এটি বিশেষত খালি স্থান বা পাহাড়ের অঞ্চলে বেশি শোনা যায়।
আমাদের লেকচার শীটটি ডাউনলোড করুন :