এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্রের ৮ম অধ্যায় দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সম্পদের হিসাবরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকে প্রতিবছর একটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকে। এই লেকচারে আলোচনা করা হয়েছে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সম্পদের হিসাবরক্ষণ: স্থায়ী সম্পদের মূল্যায়ন, অবচয়ের ধারণা, কারণ এবং অবচয় ধার্যের বিবেচ্য বিষয়সমূহ, অবচয় নির্ধারণের পদ্ধতি সমূহ, সরল রৈখিক / স্থির কিস্তি পদ্ধতি, ক্রমহ্রাসমান জের পদ্ধতি, অবচয় হিসাবভূক্তকরণ। আরো আছে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন তাই আমাদের লেকচার শীটটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করুন ।।
ভূমিকা: দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সম্পদের হিসাবরক্ষণ
সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সম্পদ। সম্পদের প্রকৃতি বা ধরণ বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। আচরণের ভিত্তিতে সম্পদকে প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। চলতি সম্পদ ও স্থায়ী সম্পদ। স্থায়ী সম্পদ হল সেই সম্পদ যে সম্পদ থেকে একাধিক বছর ধরে সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন ভূমি, দালানকোঠা, কলকব্জা, আসবাবপত্র, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক, সুনাম ইত্যাদি। স্থায়ী সম্পদ দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয়ই হতে পারে। দৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদের মধ্যে ভূমি, দালানকোঠা, কলকব্জা আসবাবপত্র অন্যতম। আর সুনাম, প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক অদৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ।
স্থায়ী সম্পদ ব্যবহারের ফলে যে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং এর মূল্য হ্রাস পায়। সম্পদের এই হ্রাসকৃত মূল্যকেই অবচয় বলে। আলোচ্য অধ্যায়ে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সম্পদ নিয়ে বিস্তরিত আলোচনা করা হয়েছে।
পাঠ- ১. স্থায়ী সম্পদের ধারণা ও মূল্যায়ন (Concept and Valuation of Fixed Assets)
যে সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কেনা হয় বা উৎপাদন করা হয় তাকে স্থায়ী সম্পদ বলে। স্থায়ী সম্পদ সাধারণত অপরিবর্তনীয়। ভূমি, দালানকোঠা, কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইতাদি স্থায়ী সম্পদ। এ ধরনের সম্পদ হতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে উপযোগিতা পেয়ে থাকে। তাই বলা যায়, এই সম্পদ স্থায়ী ভাবে কারবারের প্রয়োজনে নিযুক্ত করা হয়। স্থায়ী সম্পদকে প্রাকৃতিক, অপ্রাকৃতিক, দৃশ্যমান সম্পদ, অদৃশ্যমান বা অস্পর্শনীয় সম্পদে ভাগ করা যায়।
প্রাকৃতিক স্থায়ী সম্পদঃ যে স্থায়ী সম্পদ আমরা প্রকৃতিগতভাবে পেয়ে থাকি কিংবা মানুষ দ্বারা সৃষ্ট সম্পদ নয় তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমনঃ ভূমি।
অপ্রাকৃতিক স্থায়ী সম্পদঃ যে স্থায়ী সম্পদ মানুষ দ্বারা রূপান্তরিত তাকে অপ্রাকৃতিক স্থায়ী সম্পদ বলে। যেমনঃ যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি।
দৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদঃ যে সকল স্থায়ী সম্পদ বাস্তবে দেখা যায়, ধরা যায়, ছোঁয়া যায় তাদেরকে দৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ বলে। যেমনঃ দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, ভূমি ইত্যাদি।
অদৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদঃ যে সকল স্থায়ী সম্পদ বাস্তবে ধরা যায় না, দেখা যায় না ও ছোঁয়া যায় না তাকে অদৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ বলে। যেমনঃ সুনাম, প্যাটেন্ট, গ্রন্থস্বত্ব, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি অদৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ।
স্থায়ী সম্পদের মূল্যায়ন (Valuation of Fixed Assets)
হিসাববিজ্ঞানের ঐতিহাসিক মূল্য বা ক্রয়মূল্য নীতি অনুযায়ী স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয় মূল্যে লিপিবদ্ধ করা হয়। সম্পত্তির ক্রয়মূল্য বলতে এর চালানী মূল্যের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচ এবং একে ব্যবহার উপযোগী করতে যেসব খরচ হয় সেগুলির সমষ্টিকে বুঝায়। যেমনঃ কারখানার যন্ত্রপাতির ক্রয় মূল্যের মধ্যে ক্রয়মূল্য, পরিবহন খরচ এবং সংস্থাপন খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। সম্পত্তির মূল্য নির্ধারিত হলে এর ভিত্তিতে স্থায়ী সম্পত্তির আয়ুষ্কালের অবচয় ধার্য করা হয়।
বিভিন্ন শ্রেণীর স্থায়ী সম্পত্তির মূল্যায়নঃ
১। ভূমি (Land): ভূমির ক্রয়মূল্য বলতে প্রদত্ত ক্রয়মূল্য এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খরচকে বুঝায়। ভূমির ক্রয়মূল্য নির্ধারণে ক্রয় মূল্যের সাথে নিবন্ধন খরচ, উকিল খরচ, ভূমি দালালের কমিশন, অন্যান্য বকেয়া কর ইত্যাদি যোগ করতে হয়। যেমনঃ একটি ভূমির নগদ ক্রয়মূল্য ২,০০,০০০ টাকা, নিবন্ধন খরচ ১৫,০০০ টাকা, পরিশোধিত বকেয়া কর ৫,০০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে ভূমির মূল্য হবে (২০০০০০+ ১৫০০০+৫০০০) = ২,২০,০০০ টাকা।
ভূমি ব্যবহার উপযোগী করার জন্য খরচও ভূমির ক্রয়মূল্যের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। খালি ভূমির ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নকরণ, ভরাটকরণ, ড্রেইনিং, সমানকরণ খরচ ইত্যাদি ভূমি ব্যবহার উপযোগী খরচ। ভূমির উপর পুরাতন দালান থাকলে তা অপসারণের জন্য দালান ভাঙ্গা ও ময়লা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন খরচ ও ব্যবহার উপযোগী খরচের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ খরচ হতে ভগ্নাংশ সামগ্রী বিক্রয় আয় বিয়োগ করে অবশিষ্ট খরচ ভূমি ক্রয়মূল্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
দালানকোঠা (Building): দালান ক্রয় বা নির্মাণের সাথে জড়িত সকল ব্যয়কে দালান ব্যয় হিসাবে বিবেচনা করে দালানকে ডেবিট করা হয়। দালান ক্রয়ের ক্ষেত্রে দালানের ক্রয় মূল্য, উকিলের ফিস, মালিকানাস্বত্ব খরচ, বিমা খরচ, দালালের কমিশন ইত্যাদি দালানের সাথে অন্তর্ভুক্ত থাকে। ক্রয়কৃত দালান ব্যবহার উপযোগী করার জন্য যেসব খরচ হয় যেমন- বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত বা পুনঃস্থাপন ও দালানের মেঝে মেরামত খরচ দালান ক্রয়মূল্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
উদাহরণঃ ০১
জাওয়াদ এন্ড কোং ২৫,০০,০০০ টাকা মূল্যের একটি দালান ক্রয় করল। দালানটি ক্রয়ের জন্য উকিল ফিস ২০,০০০ টাকা, নিবন্ধন খরচ ১,০০,০০০ টাকা, দালালের কমিশন ২০,০০০ টাকা এবং মেঝে মেরামত খরচ ৫০,০০০ টাকা। এক্ষেত্রে দালানটির ক্রয় মূল্য হবে (২৫,০০,০০০ + ২০,০০০ + ১,০০,০০০ + ২০,০০০ + ৫০,০০০) = ২৬,৯০,০০০ টাকা।
যেমন দালান নির্মানের জন্য মাল, শ্রম এবং যুক্তি সঙ্গত উপরিব্যয়ের অংশ যোগ করে দালানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এ সঙ্গে স্থপতির ফি, অনুমোদন প্রাপ্তি খরচ, নির্মাণকালীন সময়ের গৃহীত ঋণের সুদ, বিমা খরচকে ও দালানের মূল্যের সাথে যোগ করতে হয়। তবে দালান নির্মাণ সম্পন্ন করার পর হতে যা পরিশোধ করা হবে তাকে ঋণের সুদ বাবদ খরচ হিসাবে দেখাতে হবে।
যদি বাইরের ঠিকাদারকে দালান নির্মাণের কাজে নিয়োজিত করা হয় তাহলে ঠিকাদারকে প্রদত্ত চুক্তি মূল্য, স্থপতির ফিস, অনুমোদন প্রাপ্তির ফিস এবং খনন খরচ ইত্যাদি দালান নির্মাণের ব্যয় হিসেবে ধরা হয়। দালান একটি অবচয়যোগ্য সম্পদ।
সরঞ্জামঃ (Equipment): সরঞ্জাম বলতে কাখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা, আসবাবপত্র, ডেলিভারী ভ্যান, অফিস সরঞ্জাম ইত্যাদি স্থায়ী সম্পত্তিকে বুঝায়। সরঞ্জাম ব্যয় বলতে ক্রয় মূল্য, জাহাজ ভাড়া অথবা যানবাহন ভাড়া, বিমা খরচ, আমদানী শুল্ক, বিক্রয় কর, সংস্থাপন ব্যয়, ব্যবহার উপযোগী যাচাই করণ খরচ ইত্যাদির সমষ্টিকে বুঝায়। সরঞ্জাম একটি অবচয়যোগ্য সম্পত্তি।
মোটরগাড়ীর লাইসেন্স ফি এবং দূর্ঘনাজনিত বিমা খরচ সরঞ্জাম খরচের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এগুলোকে কালীন খরচ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পাঠ- ২. অবচয়ের ধারণা, কারণ এবং অবচয় ধার্যের বিবেচ্য বিষয়সমূহ
অবচয়ের ধারণাঃ (Concept of Depreciation)
কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত স্থায়ী সম্পত্তি ব্যবহার, কালের আবর্তন, অপ্রচলন, সরাসরি ভোগ, বাজার মূল্যের স্থায়ী পতন ইত্যাদি দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান কারণে সম্পত্তির গুণ, পরিমাণ ও মূল্যের যে হ্রাস ঘটে তাকে অবচয় বলে।
অবচয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ Depreciation ল্যাটিন শব্দ Depretium হতে উদ্ভুত হয়েছে। De অর্থ হ্রাস পাওয়া এবং Pretium অর্থ মূল্য। সুতরাং Depretium শব্দের অর্থ মূল্য হ্রাস পাওয়া। অর্থাৎ সম্পত্তি ব্যবহারের ফলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পায় তাকে অবচয় বলে। আধুনিক হিসাববিজ্ঞানে অবচয়কে একটি বণ্টন প্রক্রিয়া বলা হয়। সম্পত্তির ক্রয়মূল্য হতে ভগ্নাবশেষ মূল্য বাদ দিয়ে সম্পত্তির কার্যকর জীবনকালের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হল অবচয়। অন্যান্য খরচের মত অবচয়ও একটি খরচ এবং প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান হিসাবে ডেবিট করা হয়। ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দালান কোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি স্থায়ী সম্পত্তি অর্জন ও ব্যবহার করতে হয়। প্রত্যেক স্থায়ী সম্পদের একটি কার্যকর জীবন থাকে। সময়ের আবর্তনে উক্ত কার্যকর ক্ষমতা ক্রমাগত হ্রাস পায়। জগতের কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত পরিসম্পদও এই নিয়মের অধীন। দৃশ্য বা অদৃশ্য কারণে সম্পত্তির কার্যকর ক্ষমতা যে পরিমাণ হ্রাস পায় তাই অবচয়। যেমন কোন প্রতিষ্ঠান ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা মূল্যের একটি মেশিন ক্রয় করল যার কার্যক্ষমতা ২০ বছরে শেষ হবে। ২০ বছর শেষে ভগ্নাবশেষ মূল্য হবে ২০,০০০ টাকা। মেশিনটি ব্যবহারের জন্য প্রতি বছর ((৫,০০,০০০-২০,০০০) ২০)= ২৪,০০০ টাকা ব্যয় ধরা হবে যা অবচয় নামে অভিহিত।
অবচয়ের বিভিন্ন ধারণার উপর ভিত্তি করে অবচয়ের যে বিভিন্ন সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার কয়েকটি নীচে উল্লেখ করা হলঃ
R.N Carter এ মতে, Depreciation is the gradual and permanent decrease in the value of an asset from any cause. অর্থাৎ যে কোন কারণে সম্পত্তির স্থায়ী ও ক্রয় মূল্যাবনতিই হল অবচয়।
Spicer and pegler এর মতে, “Depreciation may be defined as a measure of the exhaustion of the effective life of an asset from any cause during a given period” অর্থাৎ যে কোন কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সম্পত্তির কার্যকরি ক্ষমতা হ্রাসের মূল্যমান কে অবচয় বলে সংজ্ঞায়িত করা যায়।
সুতরাং, ব্যবহার বা সময় অতিবাহনের ফলে সম্পত্তির ক্রমাগত মূল্যাবনতি যা মেরামত বা আংশিক প্রতি স্থাপনের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হয় না তাকে অবচয় বলা হয়।
অবচয়ের কারণসমূহ: (Causes of Depreciation) অবচয়ের কারণসমূহকে প্রধানত দু’টি ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথাঃ
(১) অভ্যন্তরীণ কারণ (Internal Causes),
(২) বাহ্যিক কারণ (External Causes)
অবচয়ের অভ্যন্তরীণ কারণ
সম্পত্তির অন্তর্নিহিত স্বাভাবিক কারণে অবচয় সৃষ্টি হলে তাকে অবচয়ের অভ্যন্তরীণ কারণ বলে। এ জাতীয় কারণ নিম্নরূপঃ
(ক) ব্যবহারজনিত ক্ষয় (Wear and Tear): স্থায়ী সম্পত্তি ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে জীর্ণ হয়ে পড়ে এবং কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে অবচয়ের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের স্থায়ী সম্পত্তি হল কলকব্জা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি। এসব সম্পত্তির ক্ষয়-ক্ষতি ও অবচয় ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
(খ) সময়ের প্রবাহ (Effluxion or Passage of Time): কিছু কিছু সম্পত্তির ব্যবহার না হলেও সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে মূল্য হ্রাস পায়। যেমনঃ ইজারা সম্পত্তি, গ্রন্থস্বত্ব, পণ্যস্বত্ব ইত্যাদি। এসব সম্পত্তি ব্যবহার হোক বা না হোক সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে ক্ষয় প্রাপ্ত হয় এবং অবচয় ধার্য হয়।
(গ) সম্ভোগ বা নিষ্কাশন (Consumption or Extraction): সরাসরি সম্ভোগ বা নিস্কাশনের মাধ্যমে কিছু সম্পত্তির হ্রাস ঘটে ফলে অবচয় ধার্য করতে হয়। যেমন- তেলখনি, লৌহখনি, বনভূমি ইত্যাদি। এসব সম্পত্তির সম্ভোগ বা নিস্কাশন যত বেশী হবে সম্পত্তির পরিমাণ তত হ্রাস পাবে। সুতরাং সম্ভোগ বা নিস্কাশনের পরিমানের ওপর অবচয়ের পরিমাণ নির্ভর করে।
আরো পড়ুন :
অবচয়ের বাহ্যিক কারণ
সম্পত্তির অর্ন্তনিহিত স্বাভাবিক কারণ ছাড়া যখন অন্যকোন কারণে মূল্য হ্রাস ঘটে তখন সে কারণকে বাহ্যিক কারণ বলা হয়।
অবচয়ের বাহ্যিক কারণ নিম্নরূপ:
(১) অপ্রচলন (Obsolescence): নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ভোক্তার চাহিদা পরিবর্তনের ফলে কোন চালু সম্পত্তি হঠাৎ অপ্রচলিত হয়ে যেতে পারে। এই অপ্রচলনের ফলে চালু সম্পত্তির অবচয় ধরতে হয় কেননা অপ্রচলনের ফলে সম্পত্তির ব্যবহারিক মূল্য থাকে না। কোন যন্ত্রপাতি অপ্রচলনের জন্য অবচয় সৃষ্টি হলে তার জন্য যন্ত্রপাতি দায়ী নয়, প্রত্যক্ষভাবে দায়ী হল নতুন যন্ত্রপাতি আবিস্কার।
(২) বাজার দরের স্থায়ী হ্রাস (Permanent Fall in the Market Price): বাজার দর স্থায়ী হ্রাস পাওয়ার ফলে কোন কোন সম্পত্তির অবচয় ধার্য করতে হয়। যেমন- শেয়ার, সিকিউরিটি ইত্যাদি সম্পত্তির বাজার মূল্যের স্থায়ী পতন- জনিত ক্ষতি অবচয় রূপে বিবেচিত হয়।
(৩) অব্যবহার (Left Unused): অনেক সময় সম্পত্তি অব্যবহার অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে উহার গুণ, মান, পরিমাণ ও মূল্যহ্রাস পেতে পারে। অব্যবহারজনিত এই মূল্য হ্রাস অবচয়ে সৃষ্টি হয়।
(৪) অস্বাভাবিক কারণ (Abnormal Causes): অস্বাভাবিক কিছু কারণেও অবচয় সৃষ্টি হতে পারে। যেমনঃ আগুন, বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদির ফলে সম্পত্তির ক্ষতি হতে পারে ফলে সম্পত্তির মূল্য হ্রাস পায় এবং অবচয় সৃষ্টি হয়।
অবচয় নির্ধারণে বিবেচ্য বিষয়সমূহঃ (Factors to be Considered in Computation of Depreciation) সঠিকভাবে অবচয় নির্ণয় করা কঠিন কাজ। অনেকগুলো আপেক্ষিক বিষয়ের উপর অবচয় নির্ভর করে। সেগুলি সঠিক না হলে অবচয়ও সঠিক হতে পারে না।
যে সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে অবচয় নির্ণয় করা হয় তা নিচে দেয়া হলঃ
(১) সম্পত্তির ক্রয়মূল্য (Cost of the Assets) :
সম্পত্তি ক্রয় করে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয় তা অবচয় ধার্যের জন্য ভিত্তি হিসাবে ধরতে হয়। যেমন- সম্পত্তির নিট ক্রয়মূল্য, পরিবহন খরচ, আমদানি শুল্ক, পরিবহনকালে বিমা খরচ, সংস্থাপন খরচ ইত্যাদির সমষ্টি সম্পত্তির ক্রয়মূল্য।
(২) সম্পত্তির আনুমানিক আয়ুষ্কাল (Estimated Life of the Assets):
সম্পত্তিটি কার্যকর আয়ুষ্কাল বলতে বুঝায় যতদিন পর্যন্ত সম্পত্তিটি ব্যবসায়ে কার্যক্ষম থাকে এবং ব্যবসায়ে আয় উপার্জনে সাহায্য করে। সম্পত্তির কার্যকর আয়ুষ্কাল জানা না থাকলে অবচয় ধার্য করা সম্ভব নয়। সম্পত্তির আয়ুষ্কাল অনুমান ভিত্তিক সময়। একটি সম্পত্তির কার্যকর আয়ুষ্কাল নির্ধারণের সময় নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় আনতে হয়-
(ক) অনুরূপ সম্পত্তি সম্পর্কে অতীত অভিজ্ঞতা
(খ) সম্পত্তির বর্তমান অবস্থা
(গ) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ নীতি
(ঘ) বর্তমান প্রযুক্তি
(ঙ) শ্রমিকের দক্ষতা
(চ) দৈনিক ব্যবহার
(ছ) স্থানীয় অবস্থা (যেমন- আবহাওয়া)
৩) সম্পত্তির ভগ্নাবশেষ মূল্য (Scrap Value of the Assets): (
সম্পত্তির আয়ুষ্কাল শেষে যে মূল্যে সম্পত্তিটি বিক্রয় করা যাবে তাই ভগ্নাবশেষ মূল্য। এটি আনুমানিক মূল্য এবং এটি অবচয় নির্ধারণের সময় অবশ্যই বিবেচনা করতে হয়।
অবচয়যোগ্য ব্যয় (Depreciation Cost): সম্পত্তির ব্যয় হতে ভগ্নাবশেষ মূল্য বাদ দিলে যা থাকে তাই অবচয়যোগ্য ব্যয়। অবচয়যোগ্য ব্যয় অবশ্যই সম্পত্তির কার্যকর জীবনকালের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।
অবচয় ধার্য্যের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা (Objectives and Necessity of Charging Depreciation):
সকল প্রতিষ্ঠানকেই কম বেশী সম্পত্তি ব্যবহার করতে হয়। ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সম্পত্তির উপর অবচয় ধার্য করতে হয়। অবচয় ধার্যের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
(১) প্রকৃত লাভ নির্ণয়ঃ ব্যবসায়ের মুনাফা অর্জন অন্যতম উদ্দেশ্য। ক্রমাগত ব্যবহারের দরুণ সম্পত্তি ক্ষয় হয় এবং মূল্য হ্রাস পায়। তাই সম্পত্তি ব্যবহার করার জন্য যদি ব্যয় ধরা না হয় তাহলে যে নিট মুনাফা নির্ণয় করা হবে তা সঠিক হবে না। সেই জন্য প্রকৃত মুনাফা নির্ণয়ের উদ্দেশ্য সম্পত্তির উপর অবচয় ধরা অপরিহার্য।
(২) সম্পত্তি প্রতিস্থাপনঃ নিয়মিত ব্যবহার ও বিবর্তনের ফলে সম্পত্তির ব্যবহার উপযোগিতা হ্রাস পেতে পেতে নিঃশেষ হয়ে যায়। তখন নতুন সম্পত্তির প্রয়োজন হয়। পুরাতন অক্ষম ও অচল সম্পত্তির পরিবর্তে নতুন সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য ব্যবসার মুনাফা হতে প্রতি বছর কিছু অংশ অবচয় হিসাবে কেটে একটি অবচয় তহবিল সৃষ্টি করা হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয় না।
(৩) মূলধন সংরক্ষণঃ অবচয় হিসাবভুক্ত করার প্রধান উদ্দেশ্য হল কারবারের মূলধন সংরক্ষণ করা। সম্পত্তি অবচয় হিসাবভুক্ত করা না হলে ব্যবসার মুনাফা প্রকৃত মুনাফা অপেক্ষা বেশী দেখানো হয়। উক্ত মুনাফা হতে আয়কর ও লভ্যাংশ প্রদান হলে মুলত: তা মূলধন থেকেই প্রদান করা হবে এবং মূলধন হ্রাস পাবে।
(৪) সম্পত্তির মূল্যায়নঃ সম্পত্তি ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ও মূল্য হ্রাস পায়। সুতরাং, ব্যবহারিক মূল্য নির্ধারণের জন্য অবচয় ধার্য করা বিশেষ প্রয়োজন। সাধারণত ক্রয় মূল্য থেকে অবচয় বাদ দিয়ে সম্পত্তির মূল্য হিসাবে দেখানো হয়।
(৫) কর দায় নির্ণয়ঃ আয়কর আইন অনুযায়ী আয়কর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অবচয় ভাতা মঞ্জুর করা হয়। সুতরাং সঠিক আয়করের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য অবচয় ধার্য করা প্রয়োজন।
(৬) কোম্পানী আইনঃ কোম্পানী আইনে লভ্যাংশ বিতরণের পূর্বে অবচয়ের ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সুতরাং আইন মেনে চলার জন্য অবচয় ধার্য করা প্রয়োজন।
(৭) প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় নিরূপণঃ সম্পত্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রব্য উৎপাদিত হয়। সম্পত্তি ব্যবহারের ফলে যে অবচয় সৃষ্টি হয় তা হিসাবে না দেখালে সঠিক উৎপাদনের ব্যয় নির্ধারিত হবে না। কারণ অবচয় প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের একটি অংশ।
(৮) প্রকৃত আর্থিক অবস্থাঃ অবচয় ধার্য করার ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত লাভ লোকসান নির্ণয় করা সম্ভব এবং সম্পত্তির প্রকৃত মূল্যায়ন হয়। ফলে উদ্বৃত্তপত্রে ব্যবসায়ের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা প্রতিফলিত হয়।
পাঠ- ৩. অবচয় ধার্য ও হিসাবভুক্তকরণ পদ্ধতিসমূহ
অবচয় নির্ধারণের পদ্ধতি সমূহ (Methods of Determining Depreciation)
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরন ও প্রকৃতির সম্পত্তি ব্যবহৃত হয়। একই পদ্ধতিতে সকল সম্পত্তির অবচয় নির্ধারণ করা যুক্তিসংগত নয়। ফলে বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তির অবচয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
বহুল প্রচলিত এবং অনুসৃত পদ্ধতি গুলো নিম্নরূপঃ
১) সরল রৈখিক পদ্ধতি- Straigtline / Fixed methods
২) ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি- Diminishing balance method
৩) দ্বৈত হ্রাসমান পদ্ধতি- Double declining method
৪) বর্ষ সংখ্যার সমষ্টি পদ্ধতি- Sum of years digit method
৫) উৎপাদন একক পদ্ধতি- Production unit method
৬) যান্ত্রিক ঘণ্টা হার পদ্ধতি- Machine hour rate method
৭) নিঃশেষকরণ পদ্ধতি- Depletion method
৮) পুনঃমূল্যায়ন পদ্ধতি- Revaluation method
৯) বার্ষিক সমকিস্তি পদ্ধতি- Annuity method
১০) বিমা পত্র পদ্ধতি- Insurance policy method
১১) প্রতিপূরক তহবিল পদ্ধতি- Sinking fund method
১২) মাইল হার পদ্ধতি- Mileage method
অবচয় ধার্যের পদ্ধতিগুলো নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলঃ
১। সরল রৈখিক / স্থির কিস্তি পদ্ধতি (Straigh line / Fixed instalment method
এই পদ্ধতিতে সম্পত্তির ক্রয়মূল্যের উপর প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অবচয় হিসাবে ধার্য করা হয়। সম্পত্তির আয়ুষ্কাল ব্যাপী সমান অর্থ অবচয় হিসাবে দেখানো হয় বলে এ পদ্ধতিতে স্থির কিস্তি পদ্ধতি বলা হয়। এ পদ্ধতিতে অবচয়ের পরিমাণ এমনভাবে স্থির করা হয় যে সম্পত্তির জীবন কাল শেষে কোন উদ্বৃত্ত থাকে না বা কেবলমাত্র ভগ্নাবশেষ মূল্য উদ্বৃত থাকে। এ পদ্ধতিতে সম্পত্তির মোট অবচয়যোগ্য মূল্যকে কতগুলো সমান কিস্তিতে ভাগ করা হয় এবং প্রতি বছর একটি কিস্তি লাভ-লোকসান হিসাবে অবচয় হিসাবে দেখানো হয়। সম্পত্তির ক্রয়মূল্য থেকে আনুমানিক ভগ্নাবশেষ মূল্য বাদ দিলে যা থাকে তাকে বলা হয় অবচয় যোগ্য মূল্য। এই অবচয় যোগ্য মূল্যকে সম্পত্তির কার্যকর জীবকাল দিয়ে ভাগ করলে প্রতিটি হিসাবকালের অবচয় পরিমাণ নিম্নের সূত্র দ্বারা সহজেই নির্ণয় করা যায়।
বার্ষিক অবচয় = সম্পত্তির ক্রয়মূল্য-ভগ্নাবশেষ মূল্য প্রত্যাশিত কার্যকর আয়ুষ্কাল
সাধারণতঃ ইজারা সম্পত্তি, পণ্যস্বত্ব, গ্রন্থস্বত্ব ইত্যাদি সম্পত্তির ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী। এ পদ্ধতিতে অবচয় নির্ণয় করা সহজ এবং প্রতি বছর একই পরিমাণ অবচয় ধার্য করা হয় বলে অবচয় নির্ধারণের সময় বাঁচে।
২। ক্রমহ্রাসমান জের পদ্ধতি (Deminishing Balance method):
এই পদ্ধতিতে সম্পত্তির ক্রয়মূল্য হতে পুঞ্জিভূত অবচয় বাদ দিয়ে সম্পত্তি হিসাবের উদ্বৃত্তের পারিমাণের উপর নির্দিষ্ট হারে অবচয় ধার্য করা হয়। প্রতি বছর অবচয় ধার্যের ফলে সম্পত্তির বই মূল্য ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে কিন্তু অবচয় হার নির্দিষ্ট থাকে। এ পদ্ধতিতে সম্পত্তির উদ্বৃত্ত প্রতি বছর হ্রাস পায় ফলে অবচয়ের পরিমাণ হ্রাস পায়। এই জন্য এ পদ্ধতিকে ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি বলা হয়।
এই পদ্ধতিতে অবচয় নির্ধারণের জন্য অবচয়ের শতকরা হার নির্ণয় করা একান্ত প্রয়োজন। অবচয়ের হার নির্ণয়ের জন্য নিম্নোক্ত সূত্র ব্যবহার করা হয়।
অবচয়ের হার = (১- ভগ্নাবশেষ মূল্য সম্পত্তির মূল্য ১০০ (এখানে N = সম্পত্তির কার্যকর জীবনকাল) এ পদ্ধতিতে অবচয় হার নির্ণয় করে বার্ষিক অবচয় নির্ণয় করলে আয়ুষ্কাল শেষে সম্পত্তির মূল্য ও ভগ্নাবশেষ মূল্য সমান হবে।
৩। দ্বৈত হ্রাসমান পদ্ধতি (Double declining method):
কোন কোন সম্পত্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সম্পত্তির কার্যকর জীবনকালের প্রাথমিক বছরগুলোতে বেশী সেবা পাওয়া যায় এবং শেষের বছরগুলোতে সেবার মান কমতে থাকে। যেমন- কম্পিউটার মেশিনে প্রথম দিকে যত ভাল কাজ করে কয়েক বছর ব্যবহারের পর তার কাজের মান হ্রাস পায়। কাজের গতি কমে যায় এবং মেরামত খরচ বৃদ্ধি পায়। তাই ঐ সকল সম্পত্তির অবচয় নির্ধারণ পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত যাতে প্রাথমিক বছরগুলোতে অধিক পরিমাণের অবচয় হয় এবং শেষের বছরগুলোতে অবচয়ের পরিমাণ কম হয়। এরূপ পদ্ধতির একটি হল দ্বৈত হ্রাসমান পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে অবচয়ে পদ্ধতির হার সরলরৈখিক পদ্ধতির অবচয় হারের দ্বিগুণ হয়। এ পদ্ধতিতে অবচয় হার নির্ণয়ের জন্য নিম্নের সূত্র ব্যবহার করা হয়।
৪। বর্ষ সংখ্যা সমষ্টি পদ্ধতি (Sum of years digit method):
এই পদ্ধতিতে সম্পত্তির অবচয়যোগ্য মূল্যকে সম্পত্তির আয়ুষ্কালের বছরগুলোর সংখ্যা সমষ্টি দিয়ে ভাগ করে প্রতি বছরে সম্পত্তির অবশিষ্ট আয়ুষ্কাল যত বছর থাকে তা দিয়ে গুণ করে বার্ষিক অবচয় নির্ধারণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে নির্ণেয় অবচয় প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে।
৫। উৎপাদন একক পদ্ধতি (Production unit method):
এ পদ্ধতিতে কোন সম্পত্তির অবচয়যোগ্য মূল্যকে আনুমানিক মোট উৎপাদনের পরিমাণ দিয়ে ভাগ করে একক প্রতি অবচয় নির্ণয় করা হয়। এ পদ্ধতিতে সম্পত্তি ব্যবহারের ফলাফলকে ভিত্তি করে অবচয় নির্ণয় করা হয়। কোন নির্দিষ্ট হিসাবকালে যে পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদিত হয় তা দিয়ে একক প্রতি অবচয়কে গুণ করে নির্দিষ্ট হিসাবকালের অবচয় নির্ধারণ করা হয়। নিম্নের সূত্রের সাহায্যে একক প্রতি অবচয় নির্ণয় করা যায়
৬। যান্ত্রিক ঘণ্টা হার পদ্ধতি (Machine hour rate method):
এ পদ্ধতিতে সম্পত্তির কার্যকর জীবনকে কার্যকর ঘণ্টায় রূপান্তর করা হয়। সম্পত্তির অবচয়যোগ্য মূল্যকে উক্ত কার্যকর ঘণ্টা দ্বারা ভাগ করে প্রতি ঘণ্টার যে অবচয় বের করা হয় তাকে যান্ত্রিক ঘণ্টা হার পদ্ধতি বলে। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট হিসাব কালে যত কার্যকর ঘণ্টা উক্ত সম্পত্তি ব্যবহার করা হয় তা দিয়ে গুণ করে উক্ত হিসাবকালের অবচয় নির্ণয় করা হয়।
৭। মাইল হার পদ্ধতি (Mileage method)
যে সকল সম্পত্তির কার্যকর জীবনকাল মাইল বা কিলোমিটারে পরিমাপ করা যায় সে সকল সম্পত্তির অবচয় যে পদ্ধতিতে বের করা হয় তাকে মাইল হার পদ্ধতি বলে। যেমন- মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক ইত্যাদি সম্পত্তির কার্যকাল মাইল / কিলোমিটারে পরিমাপ করা যায়।
৮। নিঃশেষকরণ পদ্ধতি (Depletion method)
যে সমস্ত সম্পত্তি ব্যবহারের ফলে ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে শূন্যে পরিণত হয় সে সব সম্পত্তির ক্ষেত্রে অবচয় নির্ধারণের জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় তাকে নিঃশেষকরণ পদ্ধতি বলে। যেমন- খনিজ সম্পদ, কয়লা, লোহা, তেল, গ্যাস ইত্যাদি থেকে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ঐ সম্পত্তির মোট মূল্যকে মোট মজুদের পরিমাণ দ্বারা ভাগ করে প্রতি এককের মূল্য নির্ণয় করা যায়। প্রতি বছর যে পরিমাণ উত্তোলন করা হয় তা দ্বারা প্রতি এককের মূল্যকে গুণ করে বার্ষিক অবচয়ের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
৯। পুনঃমূল্যায়ন পদ্ধতি (Revaluation method)
এ পদ্ধতিতে প্রতি বছর শেষে সম্পত্তির পুনঃমূল্যায়ন করা হয় এবং পুনঃমূল্যায়ন শেষে স্থিরকৃত মূল্য বছরের প্রারম্ভিক মূল্য হতে বাদ দিলে যে উদ্বৃত্ত থাকে তাকেই ঐ সম্পত্তির অবচয় বলে ধরা হয়। যে সকল সম্পত্তির মূল্য নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয় এবং যাদের আয়ুষ্কাল নিশ্চিত রূপে গণনা করা যায় না। যেমন- খুচরা যন্ত্রপাতি, গো-মেহিষাদি, পণ্য চিহ্ন, চিনামাটির বাসনপত্র ইত্যাদি সম্পত্তির অবচয় নির্ণয়ে এ পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী। এ জাতীয় সম্পত্তির মূল্যায়ন সাধারনতঃ প্রযুক্তিবিদ্যায় দক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা সম্পাদন করা হয়।
১০। বার্ষিক সমকিস্তি পদ্ধতি (Annuity method)
এ পদ্ধতিতে স্থায়ী সম্পত্তির জন্য ব্যয়িত অর্থ বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করে বিনিয়োগের সুদ সম্পত্তির মূল্যের সাথে যোগ করা হয়। অর্থাৎ যে পদ্ধতিতে সম্পত্তির ক্রয়মূল্যের উপর একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ যোগ করে বছরের শেষে সম্পত্তির মূল্য ও সুদের সমষ্টি থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অবচয় হিসাবে নির্ধারণ করা হয় এবং ধার্যকৃত অবচয়ের পরিমাণ প্রতি বছর একই পরিমাণ থাকে তাকে বার্ষিক সমকিস্তি পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে সম্পত্তির কার্যকাল শেষে সম্পত্তি হিসাবটি নিঃশেষ হয়ে যায়। যেমন- ইজারা সম্পত্তি, দালানকোঠা, আসবাবপত্র ইত্যাদি সম্পত্তির অবচয় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের সুদে হার ও সম্পত্তির আয়ুষ্কালের ভিত্তিতে Annuity table হতে প্রাপ্ত মান দ্বারা সম্পত্তির ক্রয়মূল্যকে গুণ করে বার্ষিক অবচয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। অবশ্য আজকাল Annuity table এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।
১১। বিমা পদ্ধতি (Insurance Policy method)
যে পদ্ধতিতে সম্পত্তির ক্রয়মূল্যের সমান একটি বিমা পলিসি গ্রহণ করে প্রতি বছর সম্পত্তির অবচয় পরিমাণ অর্থ বিমা কোম্পানীকে প্রিমিয়াম বাবদ প্রদান করা হয় তাকে বিমা পত্র বলা হয়। এ বিমার মূল্য ও মেয়াদ এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যে সম্পত্তির আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার সাথে সাথে বিমার মেয়াদ পূর্ণ হয় এবং বিমা কোম্পানীর হতে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ সম্পত্তির মূল্যের সমান হয়। যাতে এ অর্থ দ্বারা সম্পত্তিটি পুনঃস্থাপন করা যায়।
১২। প্রতিপূরক তহবিল পদ্ধতি (Depreciation / Sinking fund method)
এ পদ্ধতিতে আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে সম্পত্তির ক্রয়মূল্য বা প্রাথমিক মূল্য দেখানো হয় এবং অবচয় তহবিলকে দায়ের দিকে দেখানো হয়। সম্পত্তির আয়ুষ্কালে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অবচয় বাবদ লাভ লোকসান হিসাবে ডেবিট দিকে এবং প্রতিপূরক তহবিল হিসাব ক্রেডিট করা হয়। সেই সাথে অবচয়ের অর্থ বাইরে বিনিয়োগ করা হয়। বিনিয়োজিত অর্থ ও মুনাফা মিলে সম্পত্তির কার্যকাল শেষে সম্পত্তির মূল্যের সমান তহবিল গঠিত হয়। সম্পত্তির কার্যকর জীবন শেষে পুরাতন সম্পত্তি অবলোপন করা হয় এবং বিনিয়োজিত অর্থ মুনাফাসহ আদায় করে নতুন সম্পত্তি ক্রয় ও প্রতিস্থাপন করা
পাঠ-৪. স্থায়ী সম্পত্তির ক্রয় ও বিক্রয় এবং অবচয় হিসাবভূক্তকরণ
১। যখন স্থায়ী সম্পত্তি নগদে ক্রয় করা হয়ঃ
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ডেবিট
নগদান হিসাব ক্রেডিট
২। যখন স্থায়ী সম্পত্তি চেকে ক্রয় করা হয়ঃ
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ডেবিট
ব্যাংক হিসাব ক্রেডিট
৩। যখন স্থায়ী সম্পত্তি ধারে বা বাকিতে ক্রয় করা হয়?
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ডেবিট
প্রদেয় হিসাব বা পাওনাদার হিসাব ক্রেডিট
৪। যখন স্থায়ী সম্পদ আনয়ন, শুল্ক, ভ্যাট ও সংস্থাপন খরচ পরিশোধ করা হয়ঃ
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ডেবিট
নগদান হিসাব ক্রেডিট
৫। যখন বার্ষিক অবচয় ধার্য করা হয়ঃ
অবচয় খরচ হিসাব ডেবিট
পুঞ্জিভূত অবচয় হিসাব ক্রেডিট
৬। হিসাব বছর শেষে যখন অবচয় হিসাব বন্ধ করা হয়ঃ
আয় বিবরণী হিসাব ডেবিট
অবচয় খরচ হিসাব ক্রেডিট
৭। যখন কোন স্থায়ী সম্পত্তি বই মূল্যের সমান মূল্যে বিক্রয় করা হয়ঃ
নগদান হিসাব ডেবিট
পুঞ্জিভূত অবচয় হিসাব ডেবিট
সংশি-ষ্ট সম্পত্তি হিসাব ক্রেডিট
৮। যখন কোন স্থায়ী সম্পত্তি লাভে বিক্রয় করা হযঃ
নগদান হিসাব ডেবিট
পুঞ্জিভূত অবচয় হিসাব ডেবিট
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ক্রেডিট
সম্পত্তি বিক্রয়ে লাভ হিসাব ক্রেডিট
৯। যখন কোন স্থায়ী সম্পত্তি ক্ষতিতে বিক্রয় করা হয়ঃ
নগদান হিসাব ডেবিট
পুঞ্জিভূত অবচয় হিসাব ডেবিট
সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষতি ডেবিট
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হিসাব ক্রেডিট
এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সম্পদের হিসাবরক্ষণ নোট PDF Download