এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্রের ৪র্থ অধ্যায় রেওয়ামিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকে প্রতিবছর একটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকে। এই লেকচারে আলোচনা করা হয়েছে রেওয়ামিল প্রস্তুত পদ্ধতি, বিবেচ্য বিষয় এবং নমুনা ছক, হিসাবের অশুদ্ধি ও অশুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ, অনিশ্চিত হিসাব ও অশুদ্ধি সংশোধন দাখিলা, অশুদ্ধি সংশোধন ও পরবর্তী রেওয়ামিল, সকল গাণিতিক সমস্যা । আরো আছে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন তাই আমাদের লেকচার শীটটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করুন ।।
ভূমিকা
রেওয়ামিল হল হিসাব চক্রের তৃতীয় ধাপ। আমরা জানি জাবেদা থেকে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়। এই খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হিসাবসমূহের উদ্বৃত্ত সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়েছে কিনা তার গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য তৈরি করা হয় রেওয়ামিল। দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারের ফলে খতিয়ানের ডেবিট জেরগুলোর সাথে ক্রেডিট জেরগুলোর যোগফল পুরোপুরি মিলে যাবে। রেওয়ামিল আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের পূর্বে তৈরী করা হয়। তাই অসাবধানতা বা হিসাববিজ্ঞানের পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবে যাতে হিসাবরক্ষণ কাজে কোন ভুল না হয় সেদিকে সঠিক খেয়াল রাখতে হবে।তবে রেওয়ামিল প্রস্তুত করলে হিসাবের ভুল-ত্রুটি সহজেই ধরা পড়ে এবং তা সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যায়।
পাঠ-১. রেওয়ামিলের ধারণা, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য।
রেওয়ামিলের ধারণা
রেওয়ামিল হিসাব চক্রের তৃতীয় ধাপ। এটি খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হিসাবসমূহের উদ্বৃত্ত নির্ণয় সঠিক হয়েছে কিনা এবং আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়। ইংরেজি Trial Balance এর বাংলা অর্থ হল রেওয়ামিল। রেওয়ামিল কোন হিসাবখাত নয়। খতিয়ান হিসাবের ডেবিট এবং ক্রেডিট উদ্বৃত্তগুলো নিয়ে তালিকা আকারে মিলকরণ বিবরণী তৈরী করাকে রেওয়ামিল বলে। খতিয়ান হিসাবের উদ্বৃত্তগুলো একটি কাগজে ছক আকারে পর্যায়ক্রমে ক্রমিক নং, হিসাবের নাম, খতিয়ান পৃষ্ঠা এবং ডেবিট উদ্বৃত্ত ডেবিট কলামে ও ক্রেডিট উদ্বৃত্ত ক্রেডিট কলামে লিখে রেওয়ামিল প্রস্তুত করতে হয়।
রেওয়ামিলের উভয় পার্শ্বের যোগফল মিলে যায়। কারণ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী প্রত্যেকটি লেনদেনকে সমান অংকে ডেবিট এবং ক্রেডিট করা হয় বলে রেওয়ামিলের ডেবিট এবং ক্রেডিট কলামের টাকার পরিমান অর্থাৎ যোগফল সমান হয়। রেওয়ামিল যদিও হিসাবের কোন অংশ নয় তথাপি আর্থিক বিবরণী নির্ভুল এবং সঠিকভাবে প্রণয়নের জন্য ইহা প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
রেওয়ামিলের উদ্দেশ্য
যদিও রেওয়ামিল কোন হিসাবের অংশ নয় তথাপি চূড়ান্ত হিসাব প্রণয়নের পূর্বে হিসাবের নির্ভুলতা যাচাই করার জন্য রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়। রেওয়ামিলের মূল উদ্দেশ্য হল দুটি- প্রতিটি হিসাব সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে কিনা এবং খতিয়ান উদ্ধৃত্তগুলোর গাণিতিক নির্ভুলতা প্রদর্শন করে কিনা যাচাই করে নেওয়া। রেওয়ামিলের প্রভাব বিবেচনা করলে আরো
কিছু উদ্দেশ্য লক্ষ্য করা যায় এবং এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই: গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই রেওয়ামিলের প্রধান উদ্দেশ্য, তাই প্রতিটি লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে দু’তরফা দাখিলা নীতি অনুযায়ী জাবেদা ও খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হয়েছে কিনা পাশাপাশি গাণিতিকভাবে হিসাবকার্য নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা জানার উদ্দেশ্যে রেওয়ামিল তৈরি করা হয়।
২. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির প্রয়োগ: দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুসারে প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষের একটিকে ডেবিট এবং অপরটিকে ক্রেডিট করে হিসাবভূক্ত করা হয়। নির্দিষ্ট সময় পরে সব ডেবিট এবং ক্রেডিট এর যোগফল সমান হলে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।
৩. আর্থিক বিবরণী প্রণয়নঃ লেনদেনগুলোর জাবেদা ও খতিয়ানভূক্ত করার পর জের নির্ণয় করা হয়। খতিয়ানের সকল উদ্বৃত্তই রেওয়ামিলে থাকে ফলে আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন সহজ হয়।
৪. শ্রম ও সময় অপচয় রোধ: খতিয়ানের সকল জেরসমূহ রেওয়ামিলে অন্তর্ভুক্ত থাকে বিধায় আর্থিক বিবরণী প্রণয়নে শ্রম ও সময় অপচয় রোধ করা যায়।
৫. ভুল উদ্ঘাটন: হিসাবরক্ষক রেওয়ামিল তৈরি করলে পরবর্তীতে তিনি নিজে বা অন্য কোন অভিজ্ঞ লোক সহজে বুঝতে পারেন হিসাবগুলিতে কোন ভুল আছে কিনা। যদি কোন ভুল থাকে তা সহজে উদ্ঘাটন করা যায়।
৬. তথ্য প্রদান: যেহেতু সকল খতিয়ান হিসাবের উদ্বৃত্ত নিয়ে রেওয়ামিল তৈরী করা হয়, সেহেতু ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে সকল তথ্য পেয়ে থাকেন। পরবর্তীতে এ তথ্যগুলো ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন কাজে বারবার ব্যবহৃত হয়।
৭. তুলনামূলক বিশ্লেষণ: রেওয়ামিলে খতিয়ানের সকল জের অন্তর্ভূক্ত থাকে বিধায় এগুলো একনজরে দেখা যায়। ফলে এক হিসাবের সাথে অন্য হিসাবের এবং বিভিন্ন বছরের জেরের মধ্যে তুলনামূলক তুলনা করা সহজ হয়।
৮. আর্থিক অবস্থা ও প্রবনতা সম্পর্কে ধারণা: রেওয়ামিল তৈরী করলে এতে সকল হিসাবের উদ্বৃত্ত পাওয়া যায়। ব্যবসায়ী উক্ত রেওয়ামিল পর্যবেক্ষণ করে তার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ও প্রবনতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
রেওয়ামিলের বৈশিষ্ট্য
হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য মূলত: রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়। এটি আর্থিক বিবরণী প্রণয়নে সাহায্য করে। নিম্নে রেওয়ামিলের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:
১. বিবরণী বা তালিকা: রেওয়ামিল খতিয়ানের জেরসমূহের সাহয্যে প্রস্তুতকৃত একটি তালিকা বা বিবরণী। এটি হিসাবের কোন অপরিহার্য অংশ নয়।
২. গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই: এটি একটি বিবরণী বিশেষ যার মাধ্যমে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়।
৩. পৃথক কাগজে প্রস্তুত: রেওয়ামিল পৃথক কাগজে তৈরী করা হয়। তাই আলাদা কোন হিসাবের বই এর জন্য সংরক্ষণ করতে হয় না।
৪. নির্দিষ্ট সময়: এটি সাধারণত হিসাবকাল শেষে একটি নির্দিষ্ট তারিখে প্রস্তুত করা হয়।
৫. সকল প্রকার হিসাব: হিসাবের প্রস্তুতি বা নির্বিশেষে সকল প্রকার হিসাব অর্থাৎ সম্পত্তি, দায়, মূলধন, আয়, ব্যয় হিসাবসমূহ এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৬. ভুল নির্ণয়ঃ এর মাধ্যমে জাবেদা ও খতিয়ানের ভুল ধরা যায়।
৭. সমন্বয়কারী: এটি খতিয়ান ও আর্থিক বিবরণীর মধ্যে সমন্বয়কারী বিবরণী হিসেবে বিবেচিত।
৮. আর্থিক অবস্থা: কারবারের সকল প্রকারের হিসাবই এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে বিধায় কারবারের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
পাঠ-২. রেওয়ামিল প্রস্তুত পদ্ধতি, বিবেচ্য বিষয় এবং নমুনা ছক।
রেওয়ামিল প্রস্তুত পদ্ধতি
রেওয়ামিল প্রস্তুত পদ্ধতি: রেওয়ামিল তৈরীর উদ্দেশ্য হলো হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা। রেওয়ামিল প্রস্তুতে তিনটি পদ্ধতি আছে।
নিম্নে এ তিনটি পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হলঃ
ক. উদ্বৃত্তের রেওয়ামিল (Trial Balance of Balance),
খ. মোট যোগফলের রেওয়ামিল (Trial Balance of Total),
গ. মোট যোগফল ও উদ্বৃত্তের রেওয়ামিল (Trial Balance of Total and Balance)
ক. উদ্বৃত্তের রেওয়ামিল (Trial Balance of Balance): এ পদ্ধতি অনুসারে খতিয়ানের বিভিন্ন হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট জের নির্ধারণ করে রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে ডেবিট জেরগুলো এবং ক্রেডিট দিকে ক্রেডিট জেরগুলো লিপিবদ্ধ করে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়। এ পদ্ধতিতে নির্ণীত রেওয়ামিলকে নীট রেওয়ামিল নামেও অভিহিত করা হয়।
খ. মোট যোগফলের রেওয়ামিল (Trial Balance of Total) : এ পদ্ধতিকে মোট রেওয়ামিলও বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে খতিয়ানভুক্ত হিসাবসমূহের জের না নিয়ে খতিয়ানের প্রতিটি হিসাবের ডেবিট দিকের যোগফল রেওয়ামিলের ডেবিট পার্শ্বে এবং খতিয়ানস্থ প্রতিটি হিসাবের ক্রেডিট দিকের যোগফল রেওয়ামিলের ক্রেডিট পার্শ্বে লিখে এই রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়।
গ. মোট যোগফল উদ্বৃত্তের রেওয়ামিল (Trial Balance of Total and Balance): এ পদ্ধতি হলো উদ্বৃত্তের রেওয়ামিল এবং মোট যোগফলের রেওয়ামিলের একটি সংমিশ্রণ মাত্র। এ পদ্ধতিতে খতিয়ানের প্রতিটি হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট দিকের যোগফলের অংক রেওয়ামিলের ডেবিট ও ক্রেডিট দিকে লেখা হয়। সাথে সাথে ডেবিট ও ক্রেডিটে আরো দুটি ঘর করা হয় যেখানে প্রতিটি হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট জের লেখা হয়।
Read More:
রেওয়ামিলের প্রস্তুত প্রণালী (Procedure for Preparing Trial Balance)
রেওয়ামিল প্রস্তুতের জন্য প্রথমে একটি ৫ ঘর বিশিষ্ট ছক তৈরী করতে হবে। এই ছকের ঘরগুলোতে পর্যায়ক্রমে ক্রমিক নম্বর, হিসাবের নাম, খতিয়ান পৃষ্ঠা, ডেবিট টাকা, ক্রেডিট টাকা লেখা হয়। ক্রমিক ঘরে হিসাবের ক্রমিক নং দিতে হবে। হিসাবের নামের ঘরে খতিয়ানের যে হিসাব হতে উদ্বৃত্ত আনা হয়েছে তার নাম, খতিয়ান পৃষ্ঠার ঘরে খতিয়ানের যে হিসাব হতে উদ্বৃত্ত আনা হয়েছে তার পৃষ্ঠা নম্বর, সব শেষে ডেবিট টাকার ঘরে ডেবিট উদ্বৃত্ত এবং ক্রেডিট টাকার ঘরে ক্রেডিট উদ্বৃত্ত লিখতে হবে। অতঃপর ডেবিট ক্রেডিট উদ্বৃত্তগুলোর যোগফল নির্ণয় করে গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা হয়।
রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণে বিবেচ্য বিষয়সমূহ (Considerable Factors for Preparing Trial Balance)
রেওয়ামিল হিসাবের তৃতীয় ধাপ, যদিও রেওয়ামিল হিসাবের অংশ নয় তথাপি হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য ইহা প্রস্তুত করা হয়। এই লক্ষ্যে হিসাবের প্রতিটি উদ্বৃত্ত যাতে করে সঠিকভাবে সঠিক পার্শ্বে অন্তর্ভুক্ত হয় সেই জন্য রেওয়ামিল প্রস্তুতের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে কিছু বিশেষ বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
এই বিবেচ্য বিষয়সমূহ হল নিম্নরূপঃ রেওয়ামিলে অন্তর্ভুক্ত হবে না
১. মজুদ পণ্য অন্তর্ভুক্তিকরণ: রেওয়ামিল প্রস্তুতের সময় প্রারম্ভিক এবং সমাপনী মজুদ পণ্য দেয়া থাকলে এ ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক মজুদ পণ্য রেওয়ামিলে অন্তর্ভুক্ত হবে সমাপনী মজুদ পণ্য রেওয়ামিলে আসবে না। কারণ সমাপনী মজুদ পণ্য ক্রয় ও প্রারম্ভিক মজুদ পণ্যের একটি অংশ। আবার অংকে সমন্বিত ক্রয় দেয়া থাকলে সমাপনী মজুদ পণ্য রেওয়ামিলে আসবে এক্ষেত্রে প্রারম্ভিক মজুদ পণ্য রেওয়ামিলে আসবে না। কেননা সমন্বিত ক্রয় প্রারম্ভিক মজুদ পণ্য ক্রয়- সমাপনী মজুদ পণ্য।
২. মনিহারির অন্তর্ভুক্তি: অংকে মনিহারির প্রারম্ভিক মজুদ, ক্রয় ও সমাপনী মজুদ দেয়া থাকলে উক্ত প্রারম্ভিক মজুদ ও মনিহারি ক্রয় অংকে অন্তর্ভুক্ত হবে। এক্ষেত্রে মনিহারি সমাপনি মজুদ অংকে আসবে না।
৩. হাতে নগদ ও ব্যাংকে জমার অন্তর্ভুক্তি: প্রারম্ভিক নগদ তহবিল এবং ব্যাংকে জমার পরিমাণ অংকে দেয়া থাকলে এগুলো রেওয়ামিলে অন্তর্ভুক্ত হবে।
৪. মূলধন নির্ণয়ঃ যদি অংকে মূলধন দেয়া না থাকে এক্ষেত্রে যদি রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকের পার্থক্য পাওয়া যায়, তাহলে ঐ পার্থক্য মূলধন হিসাবে লেখা যেতে পারে।
৫. অনিশ্চিত হিসাব: যদি রেওয়ামিলে সকল দফাগুলো সঠিকভাবে লেখার পরও দু’দিকের যোগফল না মিলে অর্থাৎ ডেবিট ও ক্রেডিট দিকের যোগফলের পার্থক্য হয় তাহলে ঐ পার্থক্যকে অনিশ্চিত হিসাব বলে
পাঠ-৩. হিসাবের অশুদ্ধি ও অশুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ
অজ্ঞতা বা পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবে কোন লেনদেন বা কোন হিসাব সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ না করলে বা বাদ পড়লে তাকে হিসাবের অশুদ্ধি বলে।
অশুদ্ধির কতিপয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় সেগুলো নিম্নরূপঃ
১. অশুদ্ধি বা ভুল ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দু’ভাবেই হতে পারে।
২. এর মাধ্যমে কোন বিষয় ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
৩. অশুদ্ধি বা ভুলের কারণে ব্যবসায়ের আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না।
অশুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ (Classification of Errors): হিসাবরক্ষকের অমনোযোগীতা বা হিসাবশাস্ত্রের পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবে অশুদ্ধি সংঘঠিত হয়।
নিম্নে অশুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করা হল।
১. এক তরফা ভুল (One Sided Errors),
২. দু’তরফা ভুল (Two Sided Errors)
এক তরফা ভুল
ক. বাদ পড়ার ভুল,
খ. লেখার ভুল,
গ. টাকার অংকে ভুল,
ঘ. খতিয়ানের উদ্বৃত্ত নির্ণয়ে ভুল,
৫. খতিয়ানের উদ্বৃত্ত স্থানান্তরে ভুল,
চ. রেওয়ামিলের যোগফল নির্ণয়ের ভুল
দু’তরফা ভুল
ক. করণিক ভুল,
খ. বাদ পড়ার ভুল,
গ. লেখার ভুল,
ঘ. বে দাখিলার ভুল,
ঙ. পরিপূরক ভুল,
চ. বিশেষ জাবেদা বইয়ের যোগফলের ভুল,
ছ. নীতিগত ভুল
১। এক তরফা ভুল: হিসাবরক্ষক কর্তৃক সকল প্রকার সাবধানতা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু ভুল ঘটে যায়, যার জন্য রেওয়ামিলে অমিল হয়। তবে যদি তা হিসাবের একটি পক্ষকে প্রভাবিত করে তাকে এক তরফা ভুল বলে। এই ধরণের ভুল পরবর্তীতে খুঁজে বের করে খুব সহজেই রেওয়ামিল সংশোধন করা যায়।
২। দু’তরফা ভুল: যদি কোন ভুল হিসাবের উভয় পক্ষকে সমানভাবে প্রভাবিত করে তবে তাকে দু’তরফা বুল বলে। সাধারণত: এক্ষেত্রে ভুল সহজে ধরা পড়ে না। হিসাবশাস্ত্রের হিসাব লিখন সংক্রান্ত পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলেই শুধু এ ভুলগুলি ধরা পড়ে।
বিভিন্ন প্রকার ভুলের বিবরণ:
ক. বাদ পড়ার ভুল: জাবেদা থেকে খতিয়ানে স্থানান্তরের সময় কোন একটি হিসাব বাদ পড়ে গেলে বা খতিয়ানের উদ্বৃত্ত রেওয়ামিলে স্থানান্তর করা না হলেতাকে বাদ পড়ার ভুল বলে। তবে এটি এক তরফা ভুল। আবার কোন লেনদেন একেবারেই লেখা না হলে তাকেও বাদ পড়া বলে। এটি দু’তরফা ভুল।
খ. লেখার ভুল: এটা মূলত টাকার অংক লেখা সংক্রান্ত ভুল। এক তরফা বা দু’তরফা উভয় প্রকার ভুল এক্ষেত্রে সংঘটিত হতে পারে। জাবেদার টাকার অংক লেখার সময় যদি কম বা বেশী লেখা হয় তবে তা দু’তরফা ভুল। আবার খতিয়ানের টাকা রেওয়ামিলে স্থানান্তরের সময় নগদ টাকা ৯০,০০০ এর স্থলে ৯,০০০ লিখলে তা এক তরফা ভুল।
গ. পরিপূরক ভুল: এটি ঘটনাক্রমে ঘটে যাওয়া ভুল যা ধরা খুব কঠিন, অর্থাৎ একটি ভুল যদি অপর এক বা একাধিক ভুলের সমষ্টি দ্বারা এমনভাবে পূরণ হয় যে, রেওয়ামিলে কোন পার্থক্য থাকে না তখন তাকে পরিপূরক ভুল বলে।
যেমন: ক্রয় হিসাবে ২৩,০০০ টাকার পরিবর্তে ৩২,০০০ টাকা ডেবিট করা হলো আবার বিক্রয় হিসাবে ৩৪,০০০ টাকার স্থলে ৪৩,০০০ টাকা ক্রেডিট করা হলো। এক্ষেত্রে রেওয়ামিল মিলে যাবে তবে ভুল রয়ে যাবে।
ঘ. নীতিগত ভুল: হিসাবরক্ষণ সংক্রান্ত নীতিমালা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে হিসাবনীতি তেকে বিচ্যুতির ফলে যে ভুল হয় তাকে নীতিগত ভুল বলে। মুলধনজাতীয় আয় ব্যয়কে মুনাফাজাতীয় আয়-ব্যয় হিসেবে গণ্য করা আবার মুনাফাজাতীয় আয়-ব্যয়কে মূলধনজাতীয় আয়ব্যয় হিসেবে গণ্য করা নীতিগত ভুল। যেমন: আসবাবপত্র ক্রয় ২০,০০০ টাকা, ক্রয় হিসাবকে ডেবিট করা।
পাঠ-৪. অনিশ্চিত হিসাব ও অশুদ্ধি সংশোধন দাখিলা
অনিশ্চিত হিসাব ও অশুদ্ধি সংশোধন দাখিলা: সাধারণভাবে যে হিসাব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না তাকে অনিশ্চিত হিসাব বলে। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে কোন হিসাব নির্ণয় না করা পর্যন্ত রেওয়ামিল মেলানোর জন্য যে হিসাবে কোন লেনদেনের টাকার অংক লিখে রাখা হয় তাকে অনিশ্চিত হিসাব বলে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি অপর্যাপ্ত তথ্যের কারণে সাময়িক হিসাবের মাধ্যমে ডেবিট ও ক্রেডিট উভয় পার্শ্বের যোগফল অসমান হলে তা সমান করা হয়, এটি একটি সাময়িক হিসাব ব্যবস্থা মাত্র। পরবর্তীতে সঠিক খাত খুঁজে বের করে বিপরীত এন্ট্রি দিয়ে অনিশ্চিত হিসাবকে অবলোপন করতে হয়।
অনিশ্চিত হিসাব ব্যবহারের উদ্দেশ্য: দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী প্রত্যেকটি লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করে হিসাবভুক্ত করা হয়। যার ফলে হিসাব চক্রের সব পর্যায়ে ডেবিট জের ও ক্রেডিট জের সমান হবে। কিন্তু কোন কারণে এর অমিল হলে ধরে নিতে হবে কোথাও ভুল রয়েছে, এ ভুলের জন্য সাময়িকভাবে অনিশ্চিত হিসাব খুলে রেওয়ামিল মিলানো হয়,
সাধারণত নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যে অনিশ্চিত হিসাব খোলা হয়।
১. তথ্যের অভাবে রেওয়ামিল মিলানোর জন্য: যখন কোন নির্দিষ্ট তারিখে কোন অর্থের নিশ্চিত খাত সম্পর্কে তথ্য পাওয়া না যায় তখন চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুতের লক্ষ্যে রেওয়ামিল মিলানোর জন্য অনিশ্চিত হিসাব খোলা হয়।
২. সর্বোত্তোম প্রচেষ্টার পরও রেওয়ামিল না মিললে: রেওয়ামিল না মিললে সকল প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ, যাতে ভুল ধরা পরে। এভাবে যথাযথ চেষ্টা করার পরও রেওয়ামিলের গরমিলের কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলে রেওয়ামিলের ডেবিট ও ক্রেডিট দিকের বিয়োগফল একটি নতুন হিসাবে রেখে রেওয়ামিল মেলানো হয়।
অশুদ্ধি সংশোধন দাখিলা
আপনি দেখেছেন হিসাবরক্ষণ সংক্রান্ত একটি ভুল এক বা একাধিক হিসাব খাতকে প্রভাবিত করে থাকে। এজন্য সংঘটিত ভুল প্রথমে বের করে দেখতে হয় এ ভুল কোন কোন হিসাবকে প্রভাবিত করেছে। যেমন-নামিক হিসাব ভুল হলে তা মুনাফার পরিমাণ বাড়ায় বা কমায়। কারণ সব নামিক হিসাবই ক্রয়-বিক্রয় ও লাভ-ক্ষতি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এসব ভুল উদ্বর্তপত্রকেও প্রভাবিত করে। কারণ লাভ-ক্ষতি উদ্বর্তপত্রের মূলধন ও দায় পাশে স্থানান্তর করা হয়। আর ব্যক্তিবাচক এবং সম্পত্তিবাচক হিসাবগুলো উদ্বর্তপত্রের অংশ বিধায় এ দু’ধরনের ভুল শুধুমাত্র উদ্বর্তপত্রকে প্রভাবিত করে থাকে। এভাবে ভুলটিকে হিসাবের এ দফাকে প্রভাবিত করেছে নাকি একাধিক দফাকে প্রভাবিত করেছে তা বের করার পর প্রয়োজনীয় শুদ্ধি জাবেদার মাধ্যমে সংশোধন করতে হয়। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোন ভুল কেটে বা মুছে শুদ্ধ করা হিসাবশাস্ত্রের নীতি নয়।
নিম্নে ভুল সংশোধনের নিয়মাবলী উদাহরণসহ দেখানো হল।
১. একটি মাত্র হিসাবের সাথে জড়িত ভুল সংশোধন: এক্ষেত্রে লেনদেনের একপক্ষ সঠিকভাবে হিসাবভুক্ত হয় এবং অন্যপক্ষ সঠিকভাবে হিসাবভুক্ত করা হয় না। জাবেদার কোন একটি হিসাবে যোগের ভুল, জাবেদা থেকে খতিয়ানে কোন হিসাবের অংক তোলার ভুল, জাবেদা থেকে খতিয়ানে স্থানান্তরের সময় ভুল, হিসাবে অংক লেখা, কোন একটি খতিয়ানের জের টানার ক্ষেত্রে ভুল, খতিয়ান থেকে রেওয়ামিলে কোন অংক তোলার সময় ভুল ইত্যাদি এ ধরণের ভুলের অর্ন্তভুক্ত। এতে হিসাবের একটি পক্ষ ভুলের শিকার হয়, অন্য পক্ষ সঠিক থাকে। রেওয়ামিল প্রস্তুতের পূর্বে/পরে কিন্তু চূড়ান্ত হিসাবের পূর্বে এবং চূড়ান্ত হিসাবের পরে এ তিন ক্ষেত্রে যদি ভুল ধরা পড়ে তাহলে এদের সংশোধন কিভাবে করা হবে তা নিম্নে দেখানো হলঃ
ক) রেওয়ামিল প্রস্তুতের পূর্বে ভুল ধরা পড়লে তা সংশোধন: রেওয়ামিল তৈরীর পূর্বেই একদিকে প্রভাব বিস্তারকারী ভুল ধরা পড়লে তার জন্য সংশোধনী জাবেদার মাধ্যমে সংশোধন করার দরকার হয় না। আর মূলতঃ এ ভুলের জন্য রেওয়ামিল মেলে না। তাই ধরা পড়লে ঐ অংকটি কেটে সঠিক অংক লিখে সই করে দিলেই চলে। অথবা ভুল ও শুদ্ধ অংকটির বিয়োগফল যোগ বা বিয়োগ (যেটি প্রযোজ্য) করলেই রেওয়ামিল মিলে যাবে। যেমন-হিসাবরক্ষক মামুনের নিকট থেকে ১০,০০০ টাকার পণ্য ধারে ক্রয় করে ক্রয় হিসাবকে ঠিকই ডেবিট করেছেন কিন্তু মামুনের হিসাবে ভুলে ১,০০০ টাকা লিখেছেন। রেওয়ামিল প্রস্তুতের পূর্বেই এ ভুল ধরা পড়লে নিম্নোক্তভাবে তা সংশোধন করা যাবে; মামুনের হিসাবের ক্রেডিট দিকে লেখা ১,০০০ টাকা কেটে ১০,০০০ টাকা লিখলে হবে অথবা ১,০০০ টাকার নীচে (১০,০০০-১,০০০) = ৯,০০০ টাকা লিখতে হবে।
খ) রেওয়ামিল প্রস্তুতের পরে কিন্তু চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুতের পূর্বে ভুল ধরা পড়লে তা সংশোধন: যদি রেওয়ামিল প্রস্তুতের পূর্বে কোন ভুল ধরা না পড়ে তবে রেওয়ামিল দু’পক্ষের বিয়োগফলকে অনিশ্চিত হিসাব বা গরমিল হিসাব নামে একটি হিসাব খুলে তাতে রেখে রেওয়ামিল মেলাতে হয়। চূড়ান্ত হিসাব তৈরীর পূর্বে এ ভুল ধরা পড়লে তা যদি একটি হিসাবকে প্রভাবিত করে তাহলে ঐ অনিশ্চিত বা গরমিল হিসাব এবং সঠিক হিসাবকে নিয়ে একটি জাবেদা দাখিলা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অনিশ্চিত হিসাবের বিপরীতে দাখিলা হবে এবং সঠিক হিসাবটির সঠিক দাখিলা হবে। এভাবে অনিশ্চিত হিসাবের কোন জের থাকবে না এবং ভুলটি শুদ্ধ হয়ে যাবে। যেমন- বিক্রয় বইয়ের যোগফল ১,০০০ টাকা কম দেখানো হয়েছে যা রেওয়ামিল মেলানোর পর ধরা পড়েছে। এক্ষেত্রে অনিশ্চিত হিসাব ক্রেডিট করে রেওয়ামিল মেলানো হয়েছিল বলে ধরে নিতে হবে।
গ) চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুতের পর ধৃত ভুল সংশোধন: এক্ষেত্রেও অনিশ্চিত হিসাব খুলে রেওয়ামিল মেলানো হয়েছে এবং চূড়ান্ত হিসাব প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে নীট লাভ বা ক্ষতির পরিমাণ সঠিক না হওয়ারই কথা। এ পর্যায়ে ধৃত ভুল নিম্নের দু’ভাগে সংশোধন হবেঃ
যদি ভুলগুলি নামিক হিসাবকে প্রভাবিত করে থাকে অর্থাৎ যদি ভুলগুলি ক্রয়, বিক্রয়, বেতন মজুরী, অবচয়, বাট্টা ইত্যাদি সংক্রান্ত হয় তাহলে তা Trading এবং Profit ও Loss Account কে প্রভাবিত করবে। যেহেতু বছর শেষে ঐ হিসাবগুলো ঐ দুই হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে লাভ-ক্ষতি বের করা হয়েছে। তাই ঐ হিসাবগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে ধরা হবে এবং যৌথমূলধনী ব্যবসায়ের লাভ-লোকাসান বন্টন হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। এভাবে অনিশ্চিত হিসাব এবং সমন্বয় হিসাবের জের শুন্যে আনতে হবে। নিম্নে এর একটি উদাহরণ দেয়া হল: ১,০০০ টাকার পন্য ক্রয় বইতে লেখা হয়নি যা চূড়ান্ত হিসাব তৈরির পর ধরা পড়েছে। এক্ষেত্রে নিশ্চয়ই অনিশ্চিত হিসাবকে ডেবিট করে রেওয়ামিল মেলানো হয়েছিল। সুতরাং এর সংশোধন করতে হলে নিম্নোক্ত জাবেদা দাখিলা দিতে হবেঃ
পাঠ-৫. অশুদ্ধি সংশোধন ও পরবর্তী রেওয়ামিল
অনিশ্চিত হিসাব শুদ্ধ করা: আমরা জানি অনিশ্চিত হিসাব একটি সাময়িক হিসাব হিসাবকার্যে এক বা একাধিক বিশেষ পরিস্থিতিতে এরূপ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এরূপ ভুল বা পরিস্থিতি নিরসন হওয়া মাত্রই যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে এ জাতীয় হিসাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে যদি হিসাব বইয়ের সমুদয় ভুল ধরা পড়ে তাহলে এর পরিমান রেওয়ামিলের দু’পাশের পার্থক্য সমান হবে।। এমতাবস্থায় অনিশ্চিত হিসাবের উদ্বৃত্ত শূন্য হবে। অন্য দিকে সম্পূর্ণ ভুলের পরিমাপ নির্ণয় না হলে অনিশ্চিত হিসাবের উদ্বৃত্ত থেকে যাবে এবং, উদ্বৃত্তের প্রকৃত পরিমান আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে অপ্রদর্শিত হবে।
পরিশেষে অনিশ্চিত হিসাবের অনুমান হিসাবশাস্ত্রে থাকলেও এর ব্যাপক ব্যবহার অনুমোদিত নয়। এতে অলসতা ও প্রতারণা দেখা দিতে পারে, হিসাবে অনিশ্চিত হিসাব না রাখার চেষ্টা করা উচিৎ এবং একান্ত বাধ্য হয়ে রাখা হলেও যত দ্রুত সম্ভব ভুলগুলো খুঁজে বের করে বিপরীত দাখিলার মাধ্যমে অনিশ্চিত হিসাব বন্ধ করতে হবে।
অশুদ্ধি সংশোধন ও পরবর্তী রেওয়ামিলঃ
ব্যবসায়ের সঠিক আর্থিক ফলাফল নির্ণয়ের জন্য খতিয়ান উদ্বৃত্তসমূহের মাধ্যমে গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য সঠিক রেওয়ামিল প্রস্তুত করা আবশ্যক। কিন্তু রেওয়ামিল তৈরীর পর বা আর্থিক বিবরণী তৈরীর পূর্বে ভুল উদঘাটিত হলে উক্ত ভুল সংশোধনপূর্বক আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে হয়। এ সমস্ত উদঘাটিত ভুল একতরফা ও দুতরফা উভয়ই হতে পারে। এ পর্যায়ে উদঘাটিত ভুলগুলোর জন্য সংশোধিত জাবেদা দাখিলা দিতে হবে। অতঃপর রেওয়ামিলের উদ্বৃত্তসমূহের দ্বারা সংশোধিত জাবেদা দাখিলা খতিয়ান হিসাবের সাথে সমন্বয় করে পুনরায় খতিয়ান উদ্বৃত্তসমূহের মাধ্যমে অশুদ্ধি সংশোধন পরবর্তী রেওয়ামিল প্রস্তুত করতে হবে। ফলে কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সঠিক আর্থিক ফলাফল এবং সঠিক আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সংশোধিত খতিয়ান হিসাবের ডেবিট জেরগুলো রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে এবং ক্রেডিট জেরগুলো রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে লিপিবদ্ধ করে অশুদ্ধি সংশোধন পরবর্তী রেওয়ামিল তৈরী করা হয়। অর্থাৎ রেওয়ামিলের সাথে অশুদ্ধি সংশোধন জাবেদা সমন্বয়সাধন করে যে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয় তাই অশুদ্ধি সংশোধন পরবর্তী রেওয়ামিল।
এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র রেওয়ামিল নোট/গাইড PDF Download