এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র কার্যপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকে প্রতিবছর একটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকে। এই লেকচারে আলোচনা করা হয়েছে কার্যপত্রের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, মূলধন ও মুনাফাজাতীয় আয় ব্যয়ের ধারণা, নগদ ভিত্তিক ও বকেয়া ভিত্তিক হিসাববিজ্ঞান, প্রস্তুতকরণ। আরো আছে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন তাই আমাদের লেকচার শীটটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করুন ।।
ভূমিকা
কার্যপত্র হল বহুঘর বিশিষ্ট একটি ছক। কার্যপত্রের ছকের বিভিন্ন ঘরগুলো সমন্বয় প্রক্রিয়া ও আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি সাধারণত বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা হয়। হিসাবরক্ষক কর্তৃক সমন্বয় ও সমাপনী দাখিলাসমূহ এবং আর্থিক বিবরণীসমূহ প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করে থাকেন। কার্যপত্র প্রস্তুতের পর আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করলে ভুলত্রুটি অনেকাংশে কমে যায় এবং সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়া সহজ হয়। কার্যপত্র একটি ঐচ্ছিক বিষয়। এটি হিসাববিজ্ঞানের কোন অপরিহার্য অংশ নয়।
পাঠ- ১. কার্যপত্র কী, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য
কার্যপত্রের সংজ্ঞা (Definition of worksheet): কার্যপত্র এর অর্থ হলো কার্যবিবরণী বা তালিকা। এটি কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রদর্শনের এমন একটি মাধ্যম যেখানে রেওয়ামিল থেকে শুরু করে চূড়ান্তভাবে আর্থিক অবস্থা প্রস্তুত করা পর্যন্ত একসাথে দেখানো যায়। হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কার্যপত্রের মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে একসাথে একই ছকে রেওয়ামিল, সমন্বয়, সমন্বিত রেওয়ামিল, আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রকাশ করা যায় না। তাই বলা যায়, বহুঘরবিশিষ্ট একপ্রস্থ কাগজ বা কম্পিউটার স্প্রেডশিট-এ হিসাবরক্ষক কর্তৃক হিসাবের শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য প্রস্তুতকৃত রেওয়ামিলের পাশাপাশি সমন্বয়, আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থা বিবরণী তৈরির জন্য আরও কিছু কলাম তৈরি করে যে খসড়া প্রণয়ন করা হয় তাকে কার্যপত্র (Worksheet) বলে। সাধারণতঃ বড় প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সংখ্যা ও সমন্বয় সংক্রান্ত দফার পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে সেখানে কার্যপত্র প্রস্তুত করা অপরিহার্য। এটি প্রস্তুতের ফলে নির্ভুলভাবে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা সহজ হয়। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আর্থিক বিবরণী নির্ভুল এবং সঠিকভাবে প্রস্তুতে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে বহুঘরবিশিষ্ট একপ্রস্থ কাগজে লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে কার্যপত্র বলে।
কার্যপত্রের উদ্দেশ্য
কার্যপত্রের উদ্দেশ্য (Objective of worksheet) কার্যপত্র হিসাব সংরক্ষণের কোনো স্থায়ী রেকর্ড নয়। নিম্নে কার্যপত্রের কিছু উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হলো:
১. খতিয়ানের চূড়ান্ত জের একত্রে প্রদর্শন প্রতিষ্ঠানের সকল খতিয়ানের চূড়ান্ত জের একত্রে প্রদর্শন করার উদ্দেশ্য কার্যপত্র প্রণয়ন করা হয়। কারণ, কারবার প্রতিষ্ঠানে যে সকল লেনদেন সংঘটিত হয় তার প্রতিটি খতিয়ানের জের রেওয়ামিলে দেয়া থাকে। আর এ রেওয়ামিলের সাথে রেওয়ামিল বহির্ভূত তথ্য সমন্বয় দাখিলার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করে ফলাফল একত্রে জানা যায়।
২. হিসাব কাল শেষের কার্যক্রম সহজীকরণ: কারবারের আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য হিসাবসংক্রান্ত অনেক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। হিসাবকাল শেষে কার্যপত্র তৈরি করলে এসব কার্যক্রম অনেক সহজ হয়।
৩. আর্থিক বিবরণী প্রণয়নে সহায়তা করা কার্যপত্রের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আর্থিক বিবরণী প্রণয়নে সহায়তা করা। কারণ, আমরা জানি কার্যপত্র হলো এমন একটি খসড়া যার মাধ্যমে যে কোনো রেওয়ামিল, সমন্বয়, আয় বিবরণী, দায় ও সম্পদ একত্রে প্রকাশ করা হয়।
৪. অন্তর্বর্তীকালীন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি কার্যপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে যেকোনো সময় আর্থিক বিবরণী তৈরি করা যায়। যা কারবার প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ধরণের আর্থিক নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই খতিয়ানের হিসাবসমূহ বন্ধ না করে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে কার্যপত্র সাহায্য করে। ফলে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়।
৬. বর্তমান ও ভবিষ্যৎ খরচের ধারণা লাভ কার্যপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে বর্তমানে পরিশোধিত খরচ এবং ভবিষ্যত প্রদেয় খরচ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
৭. সমন্বয় দাখিলা দেয়া সহজ হয় কার্যপত্রে আলাদা সমন্বয় দাখিলার কলাম থাকে তাই সহজেই সমন্বয় দাখিলা দেয়া সহজ হয়।
৮. সমাপনী দাখিলা দেয়া সহজ হয় সমন্বিত রেওয়ামিল হতে মুনাফা জাতীয় দফাসমূহ আয় বিবরণীতে স্থানান্তরিত হয় ফলে সমাপনী দাখিলা দেয়া সহজ হয়।
৯. সঠিকতা যাচাই: সমন্বিত রেওয়ামিলের সাথে খতিয়ান প্রদত্ত লেনদেনগুলোর চূড়ান্ত জের ঠিক আছে কি না তার সত্যতা কার্যপত্রের মাধ্যমে যাচাই করা যায়।
১০. আর্থিক অবস্থার ফলাফল ব্যাখ্যা: কারবারের সার্বিক অবস্থা জানার জন্যই কার্যপত্র প্রণয়ন করা হয়। তাই এটি প্রণয়নের মাধ্যমে কারবারের নিট লাভ বা ক্ষতি, দায় ও সম্পত্তির অবস্থা সম্পর্কে সহজে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
১১. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা হিসাব বছর শেষে কার্যপত্র প্রণয়নের মাধ্যমে দ্রুত আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ফলে ব্যবস্থাপকগণ কার্যপত্র হতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে থাকেন।
উপরের আলোচনা হতে বলা যায় যে, কার্যপত্রে রেওয়ামিল, সমন্বয় ও সমাপনী দাখিলার যাবতীয় বিষয়গুলো সুশৃঙ্খলভাবে একত্রিত করার পর হিসাবরক্ষক অতি দ্রুত ও বিশুদ্ধভাবে হিসাবের বইসমূহ বন্ধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
আরো পড়ুন :
কার্যপত্রের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of worksheet)
নিম্নে কার্যপত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:
ক. কার্যপত্রের মাধ্যমে যে বিবরণী তৈরি করা হয় তা হলো একটি খসড়া আর্থিক বিবরণী। এটি হিসাববিজ্ঞানের অবশ্য করণীয় কোনো বিবরণী নয়।
খ. এটি আলগা পাতা বা পৃথক খাতায় প্রস্তুত করা হয়।
গ. এটি আভ্যন্তরীণ হিসাব তথ্যের উৎস হিসাবে কাজ করে।
ঘ. কার্যপত্রের মাধ্যমে বর্তমানে পরিশোধিত খরচ ও ভবিষ্যতে প্রদেয় খরচ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ঙ. এটি হিসাব নিকাশের সুবিধার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
চ. কার্যপত্র তৈরির পর সংশ্লিষ্ট কলামসমূহের সমষ্টি সমান হওয়ার পর আর্থিক প্রতিবেদন নির্ভুলভাবে প্রস্তুত করে গাণিতিক শুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
ছ. কার্যপত্র বহুঘর বিশিষ্ট হয়। যেমন: ৮ ঘর বিশিষ্ট, ১০ বিশিষ্ট এবং ১২ ঘর বিশষ্ট।
পাঠ- ২. মূলধন ও মুনাফাজাতীয় আয় ব্যয়ের ধারণা
মূলধনজাতীয় আয়: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের যে সকল আয় অর্জিত হয় তার মধ্যে মূলধনজাতীয় আয় একটি। সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যপরিচালনার মাধ্যমে যে আয় বা মুনাফা হয় সেগুলো ব্যতীত সকল ধরণের আয়কে মূলধনজাতীয় আয় বলে। এ জাতীয় আয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর বা বারবার সংঘঠিত হয় না। এটি অনিয়মিতভাবে হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, জনাব তানজিল ২০১০ সালে একখন্ড জমি ৫,০০,০০০ টাকায় ক্রয় করেন। যা ২০১৫ সালে ৮,০০,০০০ টাকায় বিক্রয় করেন। এখানে মূলধনজাতীয় আয়ের পরিমাণ হবে (৮,০০,০০০ – ৫,০০,০০০= ৩,০০,০০০ টাকা। মূলধনজাতীয় আয়ের কয়েকটি উদাহরণ হলো-
ক. স্থায়ী সম্পত্তি বিক্রয়জনিত মুনাফা।
খ. সম্পত্তি মূল্যায়নজনিত মুনাফা।
গ. অধিহারে শেয়ার ও ঋণপত্র ইস্যু ইত্যাদি।
মুনাফাজাতীয় আয়: কারবারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে যে আয় বারবার অর্জিত হয় তাকে মুনাফাজাতীয় আয় বলে। যেমন- পণ্য বিক্রয়, এটি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত আয়। তবে কিছু অনিয়মিত আয়ও রয়েছে। যেমন- বিনিয়োগের সুদ, পুরাতন খবরের কাগজ বিক্রি, লভ্যাংশ প্রাপ্তি ইত্যাদি। মুনাফাজাতীয় আয়কে বিশদ আয় বিবরণীতে দেখানো হয় এবং আয় যদি বকেয়া থাকে তা সংশ্লিষ্ঠ বৎসরের আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে দেখাতে হয়।
মুনাফাজাতীয় আয়ের কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে তুলে ধরা হল:
ক. সেবা আয়,
খ. শিক্ষানবিশ সেলামি,
গ. লভ্যাংশ প্রাপ্তি,
ঘ. উপ-ভাড়া প্রাপ্তি,
ঙ. বিনিয়োগের সুদ
মূলধনজাতীয় ব্যয়: যে সব ব্যয়ের কার্যকারিতা একাধিক বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে এবং কারবারের স্থায়ী সম্পত্তি অর্জনের নিমিত্তে যে ব্যয় করা হয় তাকে মূলধনজাতীয় ব্যয় বলে। এ জাতীয় ব্যয়ের ফল দীর্ঘকাল ধরে ভোগ করা যায়। সুতরাং বলা যায় যে, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ে স্থায়ী সম্পদ অর্জনের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তাকে মূলধনজাতীয় ব্যয় বলে। মূলধনজাতীয় ব্যয় আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে সম্পদ পাশে দেখানো হয়।
মূলধনজাতীয় ব্যয়ের কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হল:
ক. যন্ত্রপাতি,
খ. আসবাবপত্র,
গ. মোটরগাড়ী,
ঘ. সুনাম,
৬. ট্রেডমার্ক
মুনাফাজাতীয় ব্যয়: কারবারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যেসব ব্যয় বারবার সংঘটিত হয় এবং যে সব ব্যয়ের উপোযোগ ও কার্যকারিতা স্বল্প সময়ের মধ্যে নিঃশেষিত হয় এ জাতীয় ব্যয়কে মুনাফাজাতীয় ব্যয় বলে। মুনাফাজাতীয় ব্যয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ই হয়। যে সকল ব্যয় সরাসরি উৎপাদনের সাথে জড়িত সে সকল ব্যয়কে প্রত্যক্ষ মুনাফাজাতীয় ব্যয় বলে। আর যে সকল ব্যয় সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নয়, ঐগুলোকে পরোক্ষ মুনাফাজাতীয় ব্যয় বলে। মুনাফাজাতীয় ব্যয়কে বিশদ আয় বিবরণীতে দেখানো হয়।
নিম্নে মুনাফাজাতীয় ব্যয়ের কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হল:
ক. মাল ক্রয়,
খ. মজুরি,
গ. বেতন,
ঘ. অফিস ভাড়া,
৬. মূলধনের সুদ
পাঠ- ৩. নগদ ভিত্তিক ও বকেয়া ভিত্তিক হিসাববিজ্ঞান
নগদ ভিত্তিক হিসাববিজ্ঞান
এ পদ্ধতিতে আয় তখনই আয় বলে গণ্য হবে, যখন আয় নগদে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট হিসবাকাল বছরে নগদে প্রাপ্তি সংশ্লিষ্ট বছরের আয় হিসাবে বিবেচিত হবে। এ পদ্ধতিতে বকেয়া আয় হিসাবভুক্ত হয় না। এ পদ্ধতিতে মালিক কর্তৃক অতিরিক্ত মূলধন বিনিয়োগ এবং ঋণকৃত মূলধন নগদে প্রাপ্ত হলে এদেরকেও আয় অর্জিত লেনদেন বলে চিহ্নিত করা হবে। নগদ প্রাপ্তি ও প্রদানের পার্থক্যই হবে নিট লাভ। এ পদ্ধতি অনেকের কাছে সমাদৃত কারণ এর গণনাকার্য সহজ, খুবই বাস্তবপূর্ণ। যদিও এ পদ্ধতি অনেকের পছন্দ তবুও এ পদ্ধতির অনেক কিছুর অভাব রয়েছে। তাই হিসাবরক্ষকগণ বকেয়া ভিত্তিক হিসাব বেশি পছন্দ করেন। কেননা এ পদ্ধতি অনেক যুক্তিনির্ভর ও বিজ্ঞানভিত্তিক। সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছোট কারবারি প্রতিষ্ঠান, পেশাদার ব্যক্তি, আইনজীবি, ডাক্তার তাদের হিসাব নগদ ভিত্তিতে করে থাকেন। মুনাফা অর্জিত হয়েছে কিন্তু নগদে পাওয়া যায়নি বলে হিসাবভুক্ত হবে না এটি আয় চিহ্নিতকরণ নীতির পরিপন্থী এবং আয়-ব্যয় সংযোগ ধারণা অনুযায়ী আয়ের বিপক্ষে সঠিকভাবে হিসাব লিপিবদ্ধ হয় না তাই নগদ ভিত্তিক হিসাব পদ্ধতি অনেক সময় আর্থিক বিবরণীকে ভুল পথে পরিচালিত করে। নগদভিত্তিক হিসাব পদ্ধতি GAAP পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে চলতে ব্যর্থ হয়। নগদ ভিত্তিক হিসাববিজ্ঞান অনুযায়ী সম্পত্তি ক্রয় করা হলে খরচ হিসাবে হিসাবভুক্ত করা হয়। এ ব্যবস্থায় আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে সম্পদ পাশে শুধু নগদ তহবিল এবং দায় পাশে শুধু মূলধন থাকবে
বকেয়া ভিত্তিক হিসাব
এ হিসাব পদ্ধতি দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ নিয়মনীতি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বছরের প্রাপ্য আয় ও প্রদেয় ব্যয়ের হিসাব আয়-ব্যয়ের হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে আয়-ব্যয়ের হিসাব করা হয়। এক্ষেত্রে লেনদেনটির জন্য নগদ অর্থ-প্রদান বা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা বিবেচনা করা হয় না। চলতি বছরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার আয় ও খরচগুলো হিসাবভুক্ত করা হয়। প্রাপ্য ও প্রদেয় ভিত্তিক হিসাব পদ্ধতির মূল কথা হলো যে, লেনদেন যদি সংঘটিত হয়ে থাকে বা ঘটনা যদি ঘটে থাকে এর পরিণতি দেখা দিবেই। পরিনামকে হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হবে যদিও নগদে লেনদেনের নিষ্পত্তি কিছুকাল পরে হবে। এরূপ লেনদেনের লিপিবদ্ধকরণ ছাড়া হিসাব তথ্য অসম্পূর্ণ, এমনকি বিভ্রান্তিকরও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বাবদ ২০১৫ সালে মাসিক ১,০০০ টাকা হিসাবে সম্পূর্ণ বছরে মোট ১২,০০০ টাকা ভাড়া প্রদান করতে হবে। সারা বছর ভাড়া বাবদ মোট ১০,০০০ টাকা নগদে প্রদান করা হলে বছরে ক্ষেত্রে বকেয়া থাকবে (১২,০০০- ১০,০০০) = ২,০০০ টাকা। এখানে বকেয়া ভিত্তিক হিসাব ব্যবস্থায় আয় বিবরণীতে ভাড়া খরচ প্রদর্শন করার সময় ১০,০০০ টাকার সাথে ২,০০০ টাকা বকেয়া ভাড়া যোগ করে মোট ১২,০০০ টাকা দেখাতে হবে।
উপরের আলোচনা হতে বলা যায় যে, একটি হিসাবকালের শেষে ঐ হিসাবকালের যাবতীয় প্রাপ্ত ও প্রাপ্য বা অনাদায়ী আয় এবং প্রদত্ত ও অপ্রদত্ত বা বকেয়া খরচসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে কাবারের লাভ-লোকসান নির্ণয় পদ্ধতিতে প্রাপ্য ও প্রদেয় ভিত্তিক হিসাব বলে।
পাঠ-৪. কার্যপত্র প্রস্তুতকরণ
কার্যপত্র প্রস্তুতের বিভিন্ন ধাপগুলো বর্ণনা করতে পারবেন।
কার্যপত্র প্রস্তুত করার নিয়মাবলী: কার্যপত্র হলো হিসাবরক্ষকদের একটি কার্যপদ্ধতি। তাই এ কার্যপত্র হিসাবরক্ষকগণ বিভিন্নভাবে প্রস্তুত করে থাকেন। তবে যেভাবেই কার্যপত্র প্রস্তুত করা হোক না কেন তা অবশ্যই এর উদ্দেশ্যের সাথে মিল থাকতে হবে। এটি সাধারণত আর্থিক বিবরণীর পূর্বে প্রস্তুত করা হয়।
নিম্নে কার্যপত্র প্রস্তুতের নিয়মাবলী বর্ণনা করা হলো:
১. নাম ও তারিখ: কার্যপত্র প্রস্তুতের সময় ছকের উপরে প্রতিষ্ঠানের নাম ও প্রস্তুতের তারিখ লিখতে হয়।
২. ঘর অঙ্কন ও শিরোনাম লিখন: প্রয়োজনীয় ঘর অঙ্কন করে প্রত্যেক ঘরের শিরোনাম লিখতে হবে।
৩. রেওয়ামিল: কার্যপত্র প্রণয়নের জন্য যে রেওয়ামিল দেয়া থাকে সে রেওয়ামিলের ডেবিট উদ্বৃত্তগুলো ডেবিট এর ঘরে এবং ক্রেডিট উদ্বৃত্তগুলো ক্রেডিটের ঘরে লিপিবদ্ধ করে যোগফল সমান আছে কি না তা যাচাই করে নেয়া হয়। এরূপ রেওয়ামিলকে সমন্বয় পূর্ব রেওয়ামিল বলে।
৪. সমন্বয়: রেওয়ামিলের নিচে যে অতিরিক্ত লেনদেনগুলো দেয়া থাকে সেগুলোকে সমন্বয়ের ঘরে ডেবিট ও ক্রেডিট বিন্যাস করে হিসাবভুক্ত করতে হয়। তবে উক্ত লেনদেনগুলো সমন্বয় সাধনের ডেবিট বা ক্রেডিট করার মতো কোনো দফা রেওয়ামিলে না থাকলে উক্ত হিসাবের যথাযথ নামকরণ করে রেওয়ামিলের সমষ্টির নিচে সমন্বয়ের ঘরগুলোতে লিখতে হবে। এরপর সমন্বয়ের ডেবিট ও ক্রেডিট ঘর দু’টি যোগ করে যোগফলের সমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়।
৫. সমন্বিত রেওয়ামিল: সমন্বয় ঘরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় সমন্বয়গুলো লিখার পর প্রদত্ত রেওয়ামিলের টাকার অঙ্কের সাথে সমন্বয় ঘরের টাকার অঙ্ক যোগ-বিয়োগ করে সমন্বিত রেওয়ামিল করা হয়। রেওয়ামিলের যে দফার পাশে সমন্বয় ঘরে কোনো টাকা থাকে না সে সকল লেনদেন রেওয়ামিল হতে সরাসরি সমন্বিত রেওয়ামিলে যাবে। সবশেষে উভয় পার্শ্বের যোগফল বের করে গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করতে হয়।
৬. বিশদ আয় বিবরণী: সমন্বিত রেওয়ামিল হতে মুনাফাজাতীয় আয় ও ব্যয়সমূহ এ বিবরণীতে লিখতে হয়। এ বিবরণীর ডেবিট দিকে মুনাফাজাতীয় খরচগুলো আর ক্রেডিট দিকে মুনাফাজাতীয় আয়গুলো বসাতে হয়। বিশদ আয় বিবরণীর আয়ের সমষ্টি, ব্যয়ের সমষ্টি অপেক্ষা বেশি হলে পার্থক্যকে নিট লাভ বলা হয়। অপরদিকে ব্যয়ের সমষ্টি, আয়ের সমষ্টির চেয়ে বেশি হলে তাকে নিট ক্ষতি বলে।
৭. সংরক্ষিত আয় বিবরণী: কোম্পানির ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আয় বিবরণী নামে একটি অতিরিক্ত কলাম আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে পূর্বে সংযুক্ত করতে হবে। এ বিবরণীতে কোম্পানির মুনাফা বণ্টন সংক্রান্ত লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন: লভ্যাংশ প্রদান, আয়কর ইত্যাদি। তাছাড়া বিশদ আয় বিবরণী থেকে নির্ণীত নিট লাভ ও বিবরণীর ক্রেডিট দিকে আয় নির্ণীত কার্য ডেবিট দিকে বসবে।
৮. আর্থিক অবস্থার বিবরণী: সমন্বিত রেওয়ামিল থেকে সম্পত্তি জাতীয় দফাগুলো আর্থিক অবস্থার বিবরণীর ডেবিট দিকে এবং দায় স্বত্ত্বাধিকার সংক্রান্ত দফাগুলো ক্রেডিট দিকে লিখতে হয়।
HSC Accounting 1st paper Worksheet note PDF Download